Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজধানীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ, শিক্ষিকা কারাগারে

মাস তিনেক আগে রামপুরার একটি আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি হয় মুনতাহার মিম (১৪)। গতকাল শনিবার মাদ্রাসা ভবনের বাথরুম থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একটি চিঠি। সেটি মুনতাহারের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ আদালতকে বলেছে, মাদ্রাসার এক শিক্ষিকার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে এই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

উদ্ধার হওয়া চিঠিতে লেখা, ‘তাছলিমা খালামণি আপনি আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিলেন। আপনি আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা কারও সঙ্গে করবেন না।’ তাছলিমা (২৬) পশ্চিম রামপুরার জাতীয় মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষিকা।

মুনতাহারের বাবা হারুন মোল্লা গতকাল হাতিরঝিল থানায় শিক্ষিকা তাছলিমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অভিযোগ আনেন, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী শিক্ষিকা তাছলিমা। এ শিক্ষিকার নিষ্ঠুর আচরণ সহ্য করতে না পেরেই তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মুনতাহারের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়।

মুনতাহারের বাবার অভিযোগ পাওয়ার পর গতকালই তাছলিমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার তাঁকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, শিক্ষিকা তাছলিমা মুনতাহারকে অপমানজনক কথাবার্তা বলতেন। এ ক্ষোভে মুনতাহার আত্মহত্যা করেছে। আদালত পরে তাছলিমাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, মুনতাহার যে বিভাগে পড়ত সে বিভাগে তাছলিমা ক্লাস নিতেন না। তাছলিমা মাদ্রাসার জেনারেল বিভাগের শিক্ষক। আর মুনতাহার পড়ত অন্য বিভাগে।

তাছলিমার আইনজীবীরা অবশ্য আদালতকে বলেছেন, শিক্ষিকা ছাত্রীকে লেখাপড়া করার জন্য শাসন করে থাকেন। তার মানে এই নয়, তাছলিমা ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যা করায় প্ররোচনা দিয়েছেন। তাছলিমা ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি নির্দোষ।

মুনতাহারের মৃত্যু
মুনতাহারের বাবা হারুন মোল্লা ঢাকার রামপুরা এলাকায় ফুটপাতে ফলের ব্যবসা করেন। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন রামপুরার উলন রোড এলাকায়। আগে মুনতাহার অন্য একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। তার বাবা গত ৬ জুন বাড়ির কাছে উলন রোডে মহিলা আবাসিক মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করিয়ে দেন। আবাসিক ছাত্রী হিসেবে মাদ্রাসায় থাকত সে।

হারুন মোল্লা বলেন, খবর পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি মাদ্রাসায় যান। পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপরে একটি বাথরুমে গিয়ে দেখেন, মেয়ের ঝুলন্ত লাশ। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি চাই।’

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মো. ফজলুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, মুনতাহারের হাতে লেখা দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে সে অনেক কথাই লিখেছে।
কিশোরীর চিঠির কিছু অংশ মামলায় তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিশোরী বলেছে, ‘সব খালামণিকে উদ্দেশ্য করে বলছি, আপনারা ছাত্রীদের এমন চাপ দিবেন না যাতে তারা আমার মতো করতে বাধ্য হয়। তাছলিমা খালামণি, আপনার আচরণ এতটাই জঘন্য যে আপনাকে মানুষ বলব নাকি…।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুনতাহারের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসামি তাছলিমার আচরণে মুনতাহার ক্ষুব্ধ ছিল, সেটা সে চিঠিতে উল্লেখ করেছে।