Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীতেও রূপপুরের ঠিকাদারের জালিয়াতি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ঠিকাদারের সরবরাহকৃত জেনারেটরটি ফেরত নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো নিয়ে যাওয়া হয়নি। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাজিন এন্টারপ্রাইজের জালিয়াতি ধরা পড়েছে রাজশাহীতেও। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের সরবরাহকৃত জেনারেটরটির মান, ক্রয় ও সরবরাহের প্রক্রিয়ার জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) সাজিনকে চিঠি দিয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জেনারেটরটি ফেরত নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।  

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ভবন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে গণপূর্ত বিভাগ। হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ১ হাজার কেভি সাবস্টেশন ও ভবন নির্মাণ এবং ৫০০ কেভি জেনারেটর কেনার জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করে। প্রায় ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজটি পায় সাজিন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। ৯৭ লাখ ৩১ হাজার টাকায় এই জেনারেটরটি ইউরোপ থেকে কেনার কথা ছিল। কিন্তু সেটি চুক্তি অনুযায়ী কেনা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যেই তারা ভবন নির্মাণের বিল তুলে নিয়েছে। তবে তাদের এখনো সাবস্টেশনের বিল দেওয়া হয়নি। 

গত মে মাসে কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতে নবনির্মিত ভবনে জেনারেটরটি রেখে যায় সাজিন এন্টারপ্রাইজের লোকজন। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে এনে সরবরাহের আগেই ঢাকায় কারখানা পরিদর্শনের সময় যন্ত্রটি চালিয়ে দেখানোর কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি, বরং প্রভাব খাটিয়ে যন্ত্রটি রেখে যায়। গতকাল পর্যন্ত জেনারেটরটি ওই ভবনেই ছিল।

গণপূর্তের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত গণপূর্ত বিভাগ রহিম আফরোজ অথবা এনার্জি প্যাকের মাধ্যমে বিদেশি মালামাল কিনে থাকে। সাজিন এন্টারপ্রাইজকেও তাদের নিজস্ব ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে জেনারেটরটি কিনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এলসি করে জেনারেটর নিয়ে আসে। তা ছাড়া এলসিতে জেনারেটরটির যে ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটি দিয়ে অনলাইনে অনুসন্ধান করলে জেনারেটর ও এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে অনুসন্ধান করে তা পাওয়া যায়নি। গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী কার্যালয় থেকে এই ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে চুক্তির আগেই জেনারেটরটি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল।

জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগেই জেনারেটরটির কেনার জন্য এলসি করা হয়েছিল। জেনারেটরটি গ্রহণ না করার জন্য এটা তাঁদের কাছে বড় কারণ। চুক্তির আগে যন্ত্রটি কোথায় ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় চিঠি পাওয়ার পরেও যদি তারা জেনারেটরটি ফেরত নিয়ে না যায়, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে। তারপরেও  জেনারেটরটি সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে এবং নতুন করে দরপত্র আহ্বান না করে তাদের দিয়েই প্রকৃত যন্ত্রটি কেনানো হবে। তারা এতে অপারগতা প্রকাশ করলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই জেনারেটরের জন্য তাদের বিল পরিশোধ করা হয়নি। সাবস্টেশনের যন্ত্র ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা হয়নি বলে সেটিরও বিল আটকে দেওয়া হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ভবনে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য যে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়, তাদের
একটি হচ্ছে এই সাজিন এন্টারপ্রাইজ। সেখানে সাজিন একাই পেয়েছে ১৪৬ কোটি টাকার তিনটি কাজ। তদন্তে উঠে এসেছে সাজিন এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত মালামাল সবচেয়ে নিম্নমানের। সাজিন এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে পাবনার এক সাংসদের ঘনিষ্ঠতার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে।

গণপূর্ত সূত্র জানায়, এই প্রকল্প তত্ত্বাবধানের জন্য সাজিনের যে ব্যবস্থাপক নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁর নাম মামুনুর রশিদ। ই-মেইলে তাঁদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া হাতে হাতে মামুনুর রশিদ সর্বশেষ চিঠিও নিয়ে গেছেন। সাজিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মামুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।