Thank you for trying Sticky AMP!!

রোহিঙ্গা নারীর ভুয়া এনআইডি সার্ভারে

প্রতীকী ছবি

লাকী নামের ৩২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নাম-ঠিকানা দিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেন। অবাক হলেও সত্য, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাঁর সেই ভুয়া নাম-ঠিকানা দেখা যাচ্ছে। এটি কীভাবে সম্ভব বুঝতে পারছেন না নির্বাচন কর্মকর্তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ওই রোহিঙ্গা নারীর। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। 

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল সোমবার নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এই মামলায় বিকেলে গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা নারী ও তাঁর সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে কীভাবে দেখা যাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না জানান চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান। গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সার্ভারে দেখা গেলেও কাগজপত্রে কোথাও ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো তথ্য নেই। এটি ভুয়া। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র এটি করতে পারে বলে নির্বাচন কর্মকর্তার ধারণা।

গতকালে বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে লাকী নামের ওই নারী পুলিশের উপস্থিতিতে প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছর আগে তিনি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন। টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলেন। সেখান থেকে এনে তাঁকে বিয়ে করেন নজির আহম্মদ। তাঁর স্বামীই বলতে পারবেন কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। তিনি কিছু জানেন না। 

যেভাবে ধরা পড়ে

মামলার এজাহারে বলা হয়, লাকী স্মার্ট কার্ড উত্তোলনের জন্য তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নগরের জুবিলি রোডে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন গতকাল সকালে। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর - ১৯৯২১৫১৩৭৭১০০০৬২৯। ঠিকানা লেখা আছে স্বামী নজির আহম্মদ। পিতা হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের আব্দুর সালাম। মাতা শাহেদা বেগম। নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রটি ভুয়া মনে হয়। এনআইডি সার্ভারে সার্চ করলে লাকীর যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে দেখা যায়। এটি ২০১৯ সালে আপলোড করা হয়। নিবন্ধন ফরম নম্বর ৪১৮৬৬৩৬৮, ভোটার সিরিয়াল নম্বর-১৭৬১, ভোটার এরিয়া কোড-মির্জাপুর (২ নম্বর ওয়ার্ড) (১২৯০)।

তাৎক্ষণিকভাবে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র লাকীর নামে ইস্যু করা হয়নি। কাগজপত্রে কোথাও কিছু নেই। মির্জাপুর এলাকার সবশেষ ভোটারের নম্বর ১৭৬০। আর লাকীর ভোটার সিরিয়াল সার্ভারে দেখা যাচ্ছে ১৭৬১। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে জানতে চাইলে তাঁরা লাকীকে চেনেন না জানান। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে লাকীর সঙ্গে আসা আজিজুর রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহানারা বেগম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে লাকী মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা নন জানা গেছে। এলাকার একটি পরিবারে কিছুদিন ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন লাকী নিজেই তাঁর পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। কীভাবে করেছেন তাঁরা জানেন না। 

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রটি তৈরি করে থাকতে পারে। তবে ভুয়া এনআইডিটি সার্ভারে কীভাবে দেখা যাচ্ছে বোধগম্য নয়। এটি এখান থেকে করা হয়নি। 

এদিকে, গতকাল গ্রেপ্তার লাকী ও আজিজুর রহমান নামের তাঁর সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ। আদেশ পাওয়ার পর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে সন্ধ্যায় নগরের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। 

জানতে চাইলে আদালত প্রাঙ্গণে আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে তাঁর বাবার সঙ্গে লাকীর পরিচয় হয়। লাকীর স্বামী তাঁর বাবা-মার ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। কীভাবে করেছেন জানেন না। 

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র ভুয়া হলে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে দেখা যায় না। এতে সহজে ধরা পড়ে যায়। কিন্তু লাকীর পরিচয়পত্রটি ভুয়া হলেও সার্ভারে দেখা যাচ্ছে। এটি কীভাবে সম্ভব, পেছনে কারা জড়িত তা বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।