Thank you for trying Sticky AMP!!

লন্ডনের পাশাপাশি ফিলিপাইনেও টাকা পাচার করেছেন সেলিম

অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধান। প্রথম আলো ফাইল ছবি

অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান লন্ডনের পাশাপাশি ফিলিপাইনেও টাকা পাচারের কথা র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় দুই সহযোগীসহ চার দিনের রিমান্ডে সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল শনিবার সেলিমের দখলে থাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উচ্ছেদ করা জমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে সেলিম প্রধানকে নামিয়ে আনার পর তাঁর গুলশান ও বনানীর অফিস ও বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় অনলাইন ক্যাসিনোর সরঞ্জামসহ তাঁর দুই সহযোগী আক্তারুজ্জামান ও রোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেলিমের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে র‌্যাব। মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় সেলিম প্রধানের ব্যবসায়িক অংশীদার কোরীয় নাগরিক লি ছাড়াও সে দেশের আরও দুই নাগরিককে আসামি করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর পথপ্রদর্শক। ঢাকার গুলশান ও বনানীতে স্থাপিত সেলিম প্রধানের পি–২৪ এবং টি–২১ অনলাইন ক্যাসিনোর সদর দপ্তর ফিলিপাইনে। সেখানকার সার্ভার থেকে গুলশানের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করা হতো। অভিযানের খবর পেয়ে অনলাইন ক্যাসিনোর সার্ভারের যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলা হয়। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার লিসহ কোরিয়ার তিন নাগরিক পালিয়ে যান। সেলিম নিজেও থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা এবং র‌্যাব-১–এর পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিস থেকে পাওয়া প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, ক্যাসিনো ব্যবসার লাভের টাকা লন্ডনে পাচারের পাশাপাশি ফিলিপাইনেও পাচার করা হয়েছে। তবে কত টাকা পাচার করা হয়েছে, তা এখনো তাঁরা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এখন কার কাছে কত টাকা পাচার হয়েছে, তা জানতে র‌্যাব আবার তাঁকে রিমান্ডে নেবে বলে তিনি জানান।

র‌্যাব সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান ২০১৬ সালে পি–২৪ ও টি–২১ নামে দুটি সফটওয়্যার চালু করেন। সেটি ডাউনলোড করে ভিডিও গেমস খেলা হতো। পরে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওই দুটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। ক্যাসিনো খেলার টাকা তাঁর ব্যাংক হিসেবে জমা হতো। এসবি কনসালটিং নামের আরেকটি ক্যাসিনোর অংশীদার ছিলেন কোরিয়ার নাগরিক লি। সেলিমের ক্যাসিনো কর্মী কেনি ও লিজার মাধ্যমে ফিলিপাইনে টাকা পাচার করতেন।

সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে সেলিম জাপানে এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। সেখানে তিনি কয়েক বছর ব্যবসা করেন। জাপানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধের পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় জেলও খাটেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আবার থাইল্যান্ডে যান। থাইল্যান্ডেও অনলাইন ক্যাসিনোসহ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে বাড়িও কেনেন।

র‍্যাব জানায়, সেলিমের বাসার সিটিটিভি ফুটেজে তারা দেখতে পায়, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আসা–যাওয়া ছিল।

সওজের জমি দখলমুক্ত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উপজেলার সাওঘাট এলাকায় জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা সড়ক ও জনপথের (সওজ) ১০ শতাংশ জমি উদ্ধার করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সেলিম প্রধান। শনিবার সকাল ১০টার দিকে সওজের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ফারুকীর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব অংশ নেয়। সওজের দুটি বুলডোজার দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেডের দোতলা ভবন, প্রতিষ্ঠানের সীমানাদেয়াল ও মূল ফটক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেটগামী অংশে সওজের জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সেলিম। এই দখলের কারণে ভুলতা উড়ালসেতুর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ আটকে যায়। ১০ শতাংশ জমি দখলমুক্তসহ আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি তাঁদের প্রেসে ছাপা হয়।

এলাকাবাসী জানান, দুই যুগ আগেও নান্নু মিয়ার ছেলে সেলিমের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। ক্যাসিনোসহ অবৈধ কারবার করে রাতারাতি তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। সেলিম মিয়া থেকে হয়ে যান ‘সেলিম প্রধান’। প্রতিদিন গভীর রাতে গাড়িবহর নিয়ে তিনি কারখানায় আসতেন। তাঁর নিরাপত্তায় থাকত অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী অনেক নেতার আনাগোনা ছিল তাঁর কারখানায়।