Thank you for trying Sticky AMP!!

লাশ দাফনের ৭ দিন পর জানা গেল আসাদুল্লাহ জীবিত

লাশ দাফনের ৭ দিন পর ‘মৃত’ আসাদুল্লাহকে (৪৫) জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮। ছবি: প্রথম আলো

লাশ দাফনের সাত দিন পর ‘মৃত’ আসাদুল্লাহকে (৪৫) জীবিত পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার পুলিশ শুক্রবার দুপুরে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা থেকে সরাইলে নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, আসাদুল্লাহ ওই থানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

আসাদুল্লাহকে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সরাইল থানায় হাজির করে পুলিশ। আসাদুল্লাহ সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের উত্তর অরুয়াইল গ্রামের আলী আকবরের ছেলে। থানায় আসাদুল্লাহ সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, তিনি গত ৯ আগস্ট অপহৃত হয়েছিলেন।

সরাইল থানার পুলিশ ৬ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের হাওর এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন রাতে পরিবারের লোকজন লাশটি আসাদুল্লাহর বলে দাবি করেন। পরদিন জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত করে পুলিশ। রাতে আসাদুল্লাহর পরিবারের লোকজন পারিবারিক কবরস্থানে লাশটি দাফন করেন।

অথচ এখন ‘জীবিত’ আসাদুল্লাহকেই নিজের বাবা দাবি করেছেন তাঁর ছেলে। আসাদুল্লাহর ছেলে মো. আবদুল্লাহ (১৮) বলেন, ‘বিকৃত লাশ দেখে বুঝতে পারিনি। তখন ধরে নিয়েছিলাম লাশটি আমার বাবার, কারণ কিছু মিল ছিল। এখন আমরা নিশ্চিত যে জীবিত ব্যক্তিই আমার বাবা।’

তবে পুলিশের ধারণা, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকদের ফাঁসাতেই অপহরণ ও খুনের নাটক সাজিয়েছিলেন আসাদুল্লাহ।

ঘটনার নেপথ্যে সরকারি জমি দখল?
পুলিশ বলছে, অরুয়াইল ইউনিয়নের শোলাকান্দি গ্রামের ৩৯ শতাংশ সরকারি জমি নিয়ে আসাদুল্লাহর সঙ্গে আক্কাস মিয়া ও মুখলেছুর রহমানের মধ্যে দুই বছর ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। একপর্যায়ে অরুয়াইল ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জি এম কাপ্তান মিয়া ও স্থানীয় বাসিন্দা আলী মিয়া আসাদুল্লাহর প্রতিপক্ষের পক্ষ নেন। এতে আসাদুল্লাহর সঙ্গে ওই তিনজনেরও বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাঁদের বেকায়দায় ফেলতে আসাদুল্লাহ একটি চক্রের প্ররোচনায় গত ৫ আগস্ট এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

৬ সেপ্টেম্বর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আসাদুল্লাহর মেয়ে মোমেনা বেগম (২২) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় আসামি ছিলেন শফিকুল ইসলাম (৩৮), তাঁর বড় ভাই তাজুল ইসলাম (৪০), স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জি এম কাপ্তান মিয়া (৪২), দক্ষিণ অরুয়াইল গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস মিয়া (৪০) ও মুখলেছুর রহমান (৩২) এবং মুখলেছুরের চাচাশ্বশুর ধামাউড়া গ্রামের মহিউদ্দিন (৫৫) ও একই গ্রামের আলী মিয়া (৪৫)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর ভয়ে ওই সাত ব্যক্তিসহ অন্তত ২০ জন এলাকাছাড়া হন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যার পর আসাদুল্লাহ উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট আসাদুল্লাহর মেয়ে মোমেনা বেগম বাদী হয়ে শফিকুল ইসলাম, জি এম কাপ্তান মিয়া, আক্কাস মিয়া ও মুখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ, অপহরণকারীরা আসাদুল্লাহকে খুন করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেন।

শফিকুল ইসলাম ও জি এম কাপ্তান মিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আসাদুল্লাহ শোলাকান্দি গ্রামের সরকারি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এসবের প্রতিবাদ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথমে জিডি করেন আসাদুল্লাহ। পরে তাঁর মেয়ে অপহরণের মামলা করেন। লাশটি আসাদুল্লাহর ছিল না। তাঁদের হেয় ও হয়রানি করার জন্য নিরীহ কোনো লোককে হত্যা করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সরাইল থানায় সাংবাদিকদের কাছে আসাদুল্লাহ দাবি করেন, গত ৯ আগস্ট আক্কাসসহ চারজন তাঁকে অপহরণ করেছিল। এ সময় তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কথিত নিহত আসাদুল্লাহকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, একটি চক্রের প্ররোচনায় আসাদুল্লাহ আত্মগোপনে গিয়ে এমন ঘটনা সাজিয়েছেন। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে সরাইল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওই লাশের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।