Thank you for trying Sticky AMP!!

লেকহেড স্কুল চালু করতে ঘুষ নেন তাঁরা

মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিন।

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুল ঘুষের বিনিময়ে চালু করে দিতে চেয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন। এ জন্য তাঁরা স্কুলটির মালিকের কাছ থেকে ঘুষও নিয়েছিলেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

তবে গ্রেপ্তারের প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুজনকে আদালতে তোলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে তোলা হবে। এখন তাঁরা ডিবির হেফাজতে রয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিসম্পৃক্ততার অভিযোগে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে খালেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে। জঙ্গিসম্পৃক্ততায় বন্ধ হওয়া এই স্কুল চালু করে
দেওয়ার নামে এই দুজন ঘুষ নিয়েছিলেন।

কেন এই দুজনকে আদালতে তোলা হয়নি, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল তাঁরা বেশ কিছু অভিযান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে এ দুজনকে নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার করেননি তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও দৃশ্যমান ও শক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন তা আরও বাড়ছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষামন্ত্রীর পিও এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারীকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে নানা আলোচনা রয়েছে।

ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও ডিবি কাউকে ধরলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ধরে।

গত রোববার রাত সাড়ে আটটায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ নাসিরউদ্দিনকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর মোতালেবকে একই সময়ে বছিলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, টাকাসহ গ্রেপ্তার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় মোতালেবকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই দুজন ‘নিখোঁজ’ থাকা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নাসিরউদ্দিন নিখোঁজ হয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার। আর মোতালেব শনিবার রাজধানীর বছিলায় নিজের নির্মাণাধীন ছয়তলা বাড়ি তদারক করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এই দুজনের সম্পত্তি ও জীবনযাপন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা আলোচনা রয়েছে।

গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কাজের চেয়ে এ বিষয়টি নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশি ভয় কাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, কয়েকজনের কারণে এখন পুরো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদনাম হচ্ছে। গত শনিবার মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু আলম খানের বাসায় গিয়ে ‘অপরিচিত ব্যক্তিরা’ খোঁজ নিয়ে আসেন। এই কর্মকর্তা গতকাল অফিসে যাননি।

এ ঘটনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে দুই দফায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিলে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। যেকোনো অপরাধ, বিশেষ করে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম হলে তার ব্যবস্থা সরকার নেবে, মন্ত্রণালয়ের ওপর যতটুকু পড়বে, তা নেবে। তাঁরা এখানে কাজ করে বলে মোটেই সহযোগিতা দেওয়া হবে না। মন্ত্রণালয় চাকরির বিধিবিধান অনুসারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেবে।

শুধু মন্ত্রণালয় নয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কখনো শক্ত ব্যবস্থা নেয় না বলে সমালোচনা রয়েছে। কিছুদিন আগে ডিআইএর এক কর্মকর্তাকে ফাঁদ পেতে ঘুষসহ হাতেনাতে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই দপ্তরে আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের দপ্তরের এমএলএসএস (পিয়ন) মোহাম্মদ আলীকে ঘুষের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি ছাড়া পান। এখন তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরেই কর্মরত। শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের আরেক কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক উঠলে এর আগে তাঁকে ঢাকায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়।