Thank you for trying Sticky AMP!!

শতাংশ গুনে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোল্লারহাট ও সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেছেন, তিনটি মৌজার ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনীর নামে শতাংশ গুনে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের কাটাখালী ও কামদেবপুর মৌজা এবং সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজপাশা মৌজার জরিপ কাজ শেষে ৩১ ধারায় (আপত্তি) রেকর্ড সংশোধনী চলছে। গত বছরের শুরুতে মাঠ জরিপের কাজ শুরু হয়। অন্য বাকি ইউনিয়নের জরিপ (অ্যাটেস্টেশন) শেষ হয়েছে।

জমির মালিকেরা বলেছেন, নলছিটি সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৩১ ধারায় (আপত্তি) নিষ্পত্তির নামে রেকর্ড সংশোধনী করে নাল (ধানি) জমি শতাংশপ্রতি ১ হাজার ও বসতভিটার জমি শতাংশপ্রতি ২ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।

সাধারণত সেটেলমেন্ট অফিসের মাঠপর্যায়ে জরিপ চলাকালে অনিয়ম বেশি হয়। একজনের জমি অন্যজনের কাছে চলে যায়। তাই জরিপ চলাকালে প্রতিটি মৌজার জমির মালিকদের পূর্বের মাঠ পরচা নিয়ে হাজির থাকতে হয়।

এ সময় তাঁদের জমির সীমানা বা আল দেখিয়ে দিতে হয়। জরিপের সময় শহরে বা বিদেশে অবস্থান করা জমির মালিকদের রেকর্ডে কম দেখানোর সুযোগ থাকে। তাঁদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী বা নিকট আত্মীয়রা আমিনদের ঘুষ দিয়ে নিজেদের নামে বেশি জমি রেকর্ড করিয়ে নেন। পরে দাগে কম পাওয়া জমির মালিকেরা খবর পেয়ে ৩০ ধারা ও ৩১ ধারার সংশোধনীর মাধ্যমে রেকর্ড ঠিক করতে গিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

মোল্লারহাট ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর স্ত্রীর কোনো ভাই নেই। তাঁরা না থাকায় শ্বশুরের প্রায় এক একর জমি চাচাশ্বশুরেরা মাঠ জরিপে নিয়ে গেছেন। এখন সেই জমি ৩১ ধারায় আপত্তি দিয়ে রেকর্ড সংশোধনী করতে হবে।

ভূমি অফিসের কর্মীরা বলেন, আমিনরা যত দিন মাঠে থাকেন সে সময়কে বুঝারত স্তর বলে। পরে তাঁরা মাঠ থেকে অফিসে গিয়ে জমির মালিকদের একটি খসড়া পরচা দেন। একে বলে তসদিক স্তর। এই তসদিক বা প্রাথমিক স্তরেও আমিনদের টাকা দিয়ে রেকর্ড সংশোধনী করা যায়।

প্রতিপক্ষ আবার আপত্তি দিলে ৩০ ধারার আপত্তি (ডিসপুট) নিষ্পত্তি করার জন্য সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের সামনে আইনজীবী নিয়োগ করে বা নিজে শুনানি করতে হয়। সেখানে প্রতিপক্ষ আবার আপত্তি দিলে ৩১ ধারায় শুনানি হয়। এই ৩০ ধারা ও ৩১ ধারা আপত্তি নিষ্পত্তি করার সময় বৈধ জমির মালিকদের সঙ্গে শতাংশ হিসেবে টাকার দরদাম করা হয়।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, সদর সেটেলমেন্ট অফিসের পাশের একটি কক্ষে নলছিটি সেটেলমেন্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে। সেখানে জমির রেকর্ডে ভুল হওয়া বিচারপ্রার্থীদের জটলা। কেউ বেঞ্চ সহকারীদের বকশিশ দিয়ে আপত্তি দিচ্ছেন। কেউ কর্মকর্তাদের সামনে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন।

নলছিটির মোল্লারহাট ইউনিয়নের মধ্য কামদেবপুর গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর ১০ শতক জমি প্রতিবেশীর নামে চলে গেছে। এ নাল জমি ৩১ ধারায় সংশোধন করাতে অফিসের কর্মকর্তাদের দিতে হবে শতাংশপ্রতি ১ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা।

সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজপাশা গ্রামের এক প্রবাসী বলেন, তাঁর বিদেশে থাকার সুযোগে প্রতিবেশীরা মাঠ জরিপে আমিনদের টাকা দিয়ে ২৬ শতাংশ জমি থেকে ১৬ শতাংশ জমি নিয়ে নিয়েছেন। এখন ৩১ ধারায় শতাংশ হারে টাকা দিয়ে সংশোধন করাতে হবে।

নলছিটি উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেকর্ড সংশোধনীতে শতাংশ হিসেবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে তাঁদের অজান্তে যদি কেউ কারও সঙ্গে লেনদেন করেন, এর জন্য তাঁরা দায়ী নন।