Thank you for trying Sticky AMP!!

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে মাদক ও স্বর্ণ চোরাকারবারিরা রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। একপর্যায়ে ঢাকা থেকে লন্ডন সরাসরি কার্গো চলাচলও বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। সর্বশেষ রোববারের বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ওই যাত্রী উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকলেন কী করে? বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সূত্রগুলো বলছে, উড়োজাহাজটির পথ ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই। উড়োজাহাজটি আন্তর্জাতিক রুটের হলেও সেটিতে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদেরও নেওয়া হয়। বিমান ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি (নিহত) অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে ঢুকে উড়োজাহাজে উঠেছিলেন। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হলেও যাত্রীদের তেমন একটা দেহ তল্লাশি করা হয় না। এই ঢিলেমির সুযোগটি ওই যাত্রী নিয়ে থাকতে পারেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পথের যাত্রীর শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল দিয়ে অন্তত দুই দফা সর্বাত্মক নিরাপত্তা তল্লাশি পার হতে হয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম নাইম হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্ত করব। সিসিটিভি আছে, সেটি চেক করব। আমাদের মেশিনে সিসিটিভি আছে, সবগুলো চেক করব। কারণ এই মেশিনের ভেতর দিয়ে যদি নেইল কাটার, খেলনা পিস্তল, ছুরি ধরা পড়তে পারে, তাহলে এগুলো ধরা হবে না...জিনিসটা খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। তদন্ত হোক তাহলে দেখা যাবে।’

নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাতে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয় দেশটির পক্ষ থেকে। এরপর শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের পরামর্শে ২০১৬ সালের মার্চে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘রেডলাইন সিকিউরিটি’র সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক। যদিও বছর দু–এক পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাজ্য। এর আগে অবশ্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বিমানবাহিনী, পুলিশ, গোয়েন্দা ও আনসার সদস্যেদের নিয়ে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক) গঠিত হয়। এভসেকের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালান চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে।

এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে ঢোকার মুখে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নিহত হন এক আনসার সদস্য। পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্পর্শকাতর জায়গায় এমনকি উড়োজাহাজে উঠে বসে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আত্মীয়কে এগিয়ে দিতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান থাই এয়ারের একটি উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিমানটি রানওয়েতে গড়ানোর আগ মুহূর্তে বিষয়টি ধরা পড়ে। নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অজুহাত তুলে বিমানটির ক্যাপ্টেন সেটি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নেমে পড়েন। এরপর তাঁকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়, এসআই আশিকুরকে নামিয়ে আধঘণ্টা দেরিতে বিমানটি ছাড়ে। আশিকুর এখন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত। আশিকুরের ঘটনার চার দিন পর একই বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় ঢুকে পড়েন কাস্টমসের রাজস্ব সহায়ক কর্মকর্তা তোহরা বেগম। তিনি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে ছিলেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তির অস্ত্রটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদি অস্ত্র নিয়ে বিমানের ভেতরে ঢুকে থাকে তাহলে নিরাপত্তার মারাত্মক ঘাটতি।
আর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার নামে সাধারণ যাত্রী ও তাঁদের স্বজনদের হয়রানির অভিযোগও পুরোনো। আতাউর রহমান নামে শরীয়তপুরের একজন বলেন, তাঁর অনেক আত্মীয় ইতালিতে থাকেন। বছরে কয়েকবার তাঁদের নিতে বা বিদায় জানাতে তিনি বিমানবন্দরে আসেন। দুই বছর আগে যখন বিমানবন্দরে আনসার সদস্য নিহত হলেন তখন বেশ কয়েক দিন তাদের গোলচত্বরেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের খিটখিটে মেজাজ আর চোখ রাঙানিও দেখতে হয়। এরপরেও বিমানবন্দরে এ রকম ঘটনা ঘটে কী করে?