Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশু রবিউলের এই পরিণতি!

নৃশংসতার শিকার হয়ে দুটি হাতই হারায় শিশু রবিউল ইসলাম৷ পরে সংযোজন করা কৃত্রিম হাত নিয়ে মা নাসিমা বেগমের কোলে কতোটাই না উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছে তাকে! ছবিটি গত বছর তোলা। ছবি: প্রথম আলো

নয় বছরের রবিউল ইসলাম ওরফে শান্ত৷ ধরে নিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিল তার দুই হাত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। সংযোজন করা হয় কৃত্রিম হাত। দেশে ফিরে ভর্তি করানো হয় স্কুলে। কিন্তু এখন লেখাপড়া ছেড়ে শিশু রবিউল ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে। 

এমন অভিযোগে সম্প্রতি রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই নারী কর্মকর্তা রুকসানা কামার। তাঁর অভিযোগ, রবিউল তাঁর কাছে থেকেই লেখাপড়া করছিল। কিন্তু গত বছর তার পরিবার তাকে নিয়ে যায়। তার পরিবারই এখন তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। এ বিষয়ে জিডি করার পর পুলিশ গিয়ে রবিউলের পরিবারকে সতর্ক করে, তবে কাজ হয়নি।

পরিবারের সঙ্গে গুলশানের কড়াইল বস্তিতে থাকত রবিউল। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সে নিখোঁজ হয়। কয়েক দিন পর দুই হাত কাটা অবস্থায় কে বা কারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। রবিউলের মা নাসিমা বেগম অভিযোগ করেছিলেন, রবিউলের সৎবাবা মো. জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন পুলিশেরও ধারণা ছিল, ভিক্ষাবৃত্তি করানোর উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে জাহাঙ্গীর এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা করেন রবিউলের মা নাসিমা। পুলিশ জাহাঙ্গীরসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ মার্চ ‘এ কেমন নির্মমতা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷

দেশে কিছুদিন চিকিৎসার পর বেশ কয়েকজনের সহায়তায় কর্মকর্তা রুকসানা রবিউলকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রবিউলের শরীরে কৃত্রিম দুটি হাত সংযোজন করা হয়। দেশে ফিরে ফরিদপুরে একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে রবিউলকে ভর্তি করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ মে প্রথম আলোয় এ নিয়ে ‘আমি এখন লিখতে পারি’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

রুকসানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরিদপুরে আমার সন্তানদের সঙ্গে লেখাপড়া করত রবিউল। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে বেড়ানোর কথা বলে রবিউলকে নিয়ে যান তার মা। কিছুদিন পর জানতে পারি, রবিউলকে নিয়ে তার পরিবার কাফরুল এলাকায় থাকছে এবং তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে লাগিয়ে আনা তার কৃত্রিম হাত খুলে ফেলা হয়েছে।’ একজনের মাধ্যমে ভিক্ষারত অবস্থায় রবিউলের একটি ছবিও হাতে পান তিনি। এ নিয়ে কাফরুল থানায় একটি জিডি করার পর পুলিশ বাসায় গিয়ে রবিউলের মাকে সতর্ক করে দেন। কিন্তু তার পরিবার এ সতর্কতা মানেনি।

জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও একদিন ওই বাচ্চাটাকে ২০ টাকা দিয়েছিলাম। পরে জিডি হলে ভিক্ষা না করানোর জন্য আমি রবিউলের মাকে বলে এসেছি। এখন ভিক্ষাবৃত্তি করানো হচ্ছে কি না, তা জানি না।’ 

স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে রবিউল ইসলামের পাশে দাঁড়ান রুকসানা কামার। ছবিটি গত বছর তোলা। ছবি: প্রথম আলো



ছেলেকে দিয়ে ভিক্ষা করানোর কথা স্বীকার করে রবিউলের মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার পোলারে দিয়া আমি যা ইচ্ছা তা করামু। আপনাদের কী?’ তিনি বলেন, ‘আমার পোলার হাত নাই। সে কী কইরা খাইব? সে ভিক্ষা করলে আপনাদের সমস্যা কী?’

রুকসানা কামার তো আপনার ছেলের দায়িত্ব নিয়েছেন—এ কথা বলার পর নাসিমা খেপে যান। বলেন, ‘রুকসানা কিছু করে নাই। আমার পোলারে মারত। তাই পোলারে নিয়ে আসছি।’

রবিউলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নাসিমা রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আমার পোলার হাত কাটে নাই।’

তবে রবিউলের সৎবাবা জাহাঙ্গীরসহ দুজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে আদালতে গত বছর অভিযোগপত্র দেন বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল বাশার। রুকসানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও চাই রবিউল তার মায়ের কাছে থাকুক। কিন্তু তাকে দিয়ে যা করানো হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। রবিউল অনেক মেধাবী। স্কুলে সে ভা​লো ফলও করেছিল। তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। প্রশাসন যেন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’

আরও পড়ুন:
‘আমি এখন লিখতে পারি’