Thank you for trying Sticky AMP!!

শীতলক্ষ্যায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

নদীর পাড়ে গৃহস্থালি বর্জ্যের স্তূপ। সম্প্রতি বন্দর আমিন আবাসিক এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বন্দর আমিন আবাসিক এলাকায় উৎপাদিত গৃহস্থালির বর্জ্যের অধিকাংশই ফেলা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। নদী ভরাটের পাশাপাশি এতে দূষণের মুখে পড়েছে শীতলক্ষ্যা ও আমিন আবাসিক এলাকার পরিবেশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বন্দর সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের অনিয়ম ও অবহেলার কারণে যত্রতত্র ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। তবে এমন পরিস্থিতির জন্য স্থানীয়দের অসচেতনতাকে দায়ী করছে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি আমিন আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্দর সেন্ট্রাল ফেরিঘাটসংলগ্ন শেফা ডকইয়ার্ড থেকে শুরু করে স্কুলঘাট পর্যন্ত নদীপাড়ের প্রায় ১০০ গজ এলাকা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের ফেলে যাওয়া বর্জ্য নদীতে ভেসে যাচ্ছে। বর্জ্যের পচা পানি জমে আছে পাশের সড়কে। পথচারীরা সেই পানি মাড়িয়ে নাক চেপে চলাচল করছেন। এলাকার ভেতরের সড়ক ও খালি জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে ময়লা–আবর্জনা।

স্থানীয়রা জানান, এলাকাটিতে প্রায় দুই হাজার পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ পরিবারই প্রায় আড়াই বছর ধরে শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত আসেন না। জমে যাওয়া বর্জ্য নিজেদেরই ফেলে আসতে হয়। প্রতি মাসে ৬০ টাকা ময়লা ফেলা বাবদ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও পরিবারপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দিতে হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণেই যত্রতত্র ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিফাত বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের তুলনায় বন্দরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ। সিটি করপোরেশন চাইলে বন্দর উপজেলাকে দূষণমুক্ত রাখতে পারে। সে জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বাড়াতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত কমিটি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে উপকমিটি করার নিয়ম রয়েছে। কমিটির দ্বিমাসিক বৈঠকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

নদীতে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ বলেন, আমিন আবাসিকের অধিকাংশ বাসিন্দাই অসচেতন। সামান্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে তাঁরা যত্রতত্র ময়লা ফেলছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে ময়লা দিচ্ছেন না।

তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক উপকমিটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না দাবি করেন বন্দর সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নেয়ামত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কখনো স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ হয়নি। তবে শিগগিরই আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বসব। প্রয়োজনে এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করব।’ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ১০০ টাকা বাঁচানোর জন্য এলাকার অধিকাংশ পরিবার নিজেদের ময়লা নিজেরা ফেলছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ৬০ টাকা আদায় করে বর্জ্য সংগ্রহ সম্ভব নয়। সে কারণে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে।

শিগগিরই নদীর পাড়ে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আলমগীর হিরন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতেও কর্মসূচি নেওয়া হবে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়টি তদারকি করা হবে বলেও জানান তিনি।