Thank you for trying Sticky AMP!!

শোরুমের মালামাল উধাও, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বনশ্রীর এই ভবনের নিচতলার শোরুম থেকে মালামাল উধাওয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বাড়ির মালিকপক্ষ ও দোকানের স্বত্বাধিকারী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। ছবি: আবদুস সালাম

রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীর ডি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ‘স্টে ইন ফ্যাশন’ নামে একটি শোরুম থেকে দুই কোটি টাকার মালামাল উধাওয়ের ঘটনায় ভবনের মালিকপক্ষ ও দোকানটির স্বত্বাধিকারী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। স্টে ইন ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মো. আবির খানের অভিযোগ, ২১ এপ্রিল রোববার দিবাগত রাতে ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম (৪৮) তাঁর দোকানের তালা খুলে মালামাল নিয়ে গেছেন। এর পর স্টে ইনের সাইনবোর্ড খুলে ক্যাফে বার্গার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন সাইফুল।

অন্যদিকে ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, স্টে ইন ফ্যাশনের মালিক রোববার রাতের বেলা ওই দোকান থেকে সব মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন।

সাইফুলের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় ২১ এপ্রিল একটি চুরির মামলা করেছেন আবির খান । মামলায় বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত চার–পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আবির খানের মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস ফকির প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির মালিকপক্ষ ও দোকান মালিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

আবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের ১ মার্চ বনশ্রীর ডি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় একটি দোকান পাঁচ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নেন। চুক্তি অনুযায়ী তিনি আট লাখ টাকা অগ্রিম এবং মাসে ৩৮ হাজার টাকা ভাড়া ও ২ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দেন। বাড়ির মালিক হারুনুর রশিদ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। তাঁর শ্যালক সাইফুল ইসলাম টিটু বাড়িটি তত্ত্বাবধান করেন। স্টে ইনের এই শোরুমে প্রসাধনসামগ্রী, গয়না, শাড়ি, পাঞ্জাবি, নারী ও শিশুদের পোশাক এবং জুতা বিক্রি করা হতো। দোকানের ডেকোরেশনের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন। কিন্তু ভাড়া নেওয়ার কয়েক মাস পরই সাইফুল নিজেই দোকানটি নিজে নিতে চান। তখন থেকে দোকান খুলতে বাধা দেন। তিনি দোকানের কর্মচারীদের মারধর করতেন এবং মালিক ও কর্মচারীদের দোকানে যেতে বাধা দিতেন থাকেন।

আবির বলেন, এ ঘটনায় রামপুরা থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। এসব ঘটনার পরপর বনশ্রী সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপে তিনি দোকানটি চালু করেন। কিন্তু কিছুদিন পর সাইফুল আবারও সাজসজ্জার টাকা ও অগ্রিম আট লাখ টাকা ফেরত না দিয়েই দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। এ কারণে দুই কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী থাকার পরও  পাঁচ মাস ধরে দোকানটি চালু করা যাচ্ছিল না। সবশেষে রোববার দিবাগত রাতে সাইফুল দোকানের তালা ভেঙে মালামাল লুট করে নিয়ে যান।

অবশ্য আজ মঙ্গলবার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১২শ বর্গফুটের দোকানটি ভাড়া দেওয়ার পর থেকে স্টে ইন ফ্যাশনের মালিক আবির খান ১০ মাস ধরে ভাড়া প্রদান করতেন না। সব মিলিয়ে তাঁর কাছে ৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা পাওনা ছিল সাইফুলের। এই টাকা পরিশোধ না করেই রাতের বেলা দোকানের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন আবির।

এ ঘটনায় বনশ্রী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবির খান ও সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বনশ্রী এলাকায় বসবাস করে আসছেন। দুজনের মধ্যে বেশ সখ্যও ছিল। এমনকি পরস্পরকে নানাভাবে সহযোগিতাও করতেন। কিন্তু সাইফুলের তত্ত্বাবধানে থাকা বাড়ির নিচে দোকানটি ভাড়া নেওয়ার পর তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। এর পর থেকে তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে আসছিলেন।

এলাকাবাসীর ধারণা, মালামাল চুরি হয়নি। পাওনা টাকা না পাওয়ার কারণে হয় সাইফুল মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন, নয়তো ভাড়া দিতে না পারায় আবির মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বনশ্রী হাউজিং সোসাইটির সভাপতি আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, আবির খান ও সাইফুল ইসলামের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। অনেক বৈঠকে আবির এলেও সাইফুল আসতেন না। কখনো আবার সাইফুল উপস্থিত থাকলে আবির খান অনুপস্থিত থাকতেন।