Thank you for trying Sticky AMP!!

সমবায়সচিবের বাণিজ্যিক তৎপরতা?

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রশান্ত কুমার রায় দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে তাঁর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্ব কেনার
জন্য দেওয়া ওই অর্থ এখন ওই ব্যবসায়ী ফেরত চেয়ে সচিবকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।
তবে সচিব এই অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি কেবল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মধ্যস্থতা করিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি এনামুল হক নামের ওই ব্যবসায়ীকে পাল্টা আইনি নোটিশ পাঠিয়ে মানহানির দায়ে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন।
প্রশান্ত কুমার রায়কে দেওয়া এনামুল হকের আইনি নোটিশের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে চুক্তিনামার একটি অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ২৩ জুলাই ড. প্রশান্ত কুমার রায় ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ডেনিম এক্সপোর্ট প্রসেসিং লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে এনামুল হকের সঙ্গে অংশীদারত্ব হস্তান্তর বা শেয়ার বিক্রির চুক্তি করেছেন। এনামুল হক ওই কোম্পানির অংশীদার হওয়ার বিনিময়ে দেড় কোটি টাকা ড. প্রশান্ত কুমারকে দেবেন।
চুক্তির ৬ নম্বর শর্ত অনুযায়ী এনামুল হক বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে চাইলে তিন মাস আগে লিখিতভাবে জানাবেন এবং বোর্ড সভার অনুমোদনের মাধ্যমে সেই টাকা ফেরত পাবেন। ২০১২ সালের ১০ আগস্ট এনামুল হক ওই দুই কোম্পানিকে ২৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকি টাকা দেবেন।
চুক্তির এসব শর্তের কথা উল্লেখ করে এনামুল হক এ বছরের ২০ জুন সচিবকে দেওয়া আইনি নোটিশে বলেছেন, প্রশান্ত কুমারের ব্যক্তিগত ই-মেইল ঠিকানা prosantaroy@hotmail.com থেকে টাকা চাওয়ায় ডেনিম পলিমার লিমিটেডের নামে সোনালী ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাব নম্বর ৩৩০০৪৬৯৪-এ টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে তিনি ২৫ লাখ টাকা পাঠান। ওই টাকা হস্তান্তরের সময় প্রশান্ত কুমার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। ওই প্রকল্পের গাড়িতে করে এনামুল হক ও প্রশান্ত গাজীপুরে ডেনিম পলিমারের কারখানাতেও যান।
প্রশান্ত কুমার রায়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ডেনিম এক্সপোর্ট প্রসেসিং লিমিটেডের সাবেক মালিক ড. নেয়ামুল বশির ও এনামুল হক আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। আমি এই দুই পক্ষকে ব্যবসায় বিনিয়োগের ব্যাপারে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। এনামুল হককে নিয়ে আমার বন্ধুর ওই কারখানাতেও যাই। এর বাইরে আমার আর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
গত ২০ জুন এনামুল হক তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে প্রশান্ত কুমার রায়ের উদ্দেশে পাঠানো আইনি নোটিশে বলেন, এনামুল হক আর কোনো অর্থ বিনিয়োগ করবেন না বলে টেলিফোনে এবং ই-মেইলে জানান। পরবর্তী সময়ে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিনি বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে ই-মেইল করেন এবং দেশে এসে টেলিফোন করেন। কিন্তু ওই টাকা তিনি ফেরত পাননি। এনামুল হক টাকা ফেরত চেয়ে যেসব ই-মেইল প্রশান্ত কুমার রায়কে করেছেন, তার অনুলিপি সরকারের তৎকালীন দুই সচিবকে দিয়েছেন।
আইনি নোটিশে সংযুক্ত নথিতে দেখা যায়, ড. প্রশান্ত কুমার রায় তাঁর ব্যক্তিগত ই-মেইল ঠিকানা থেকে পাঠানো চিঠিতে এনামুল হককে লিখেছেন: ‘অশেষ ধন্যবাদ। দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগে একটা ব্যবসায় চুক্তি করেছিলেন। সেখানে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে আর দেননি। চুক্তি খেলাপ হয়েছে কি? তার পর যে টাকা দিয়েছেন, তার সমপরিমাণ শেয়ার নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেটা যে ভুল প্রস্তাব, তা মনে হয় না। যাহোক, ভুল আমার, অপরাধও আমার, কারণ আমি সম্পৃক্ত ছিলাম।’
৮ সেপ্টেম্বর সচিব প্রশান্ত কুমারের বিরুদ্ধে আনা এনামুল হকের আইনি নোটিশ সম্পর্কে জানতে মন্ত্রণালয়ে তাঁর কক্ষে যাওয়া হয়। প্রসঙ্গটি তুললে কোম্পানি দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চুক্তি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন সচিব। তবে ওই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়ায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। আলাপের একপর্যায়ে তিনি তাঁর কক্ষে থাকা একটি স্যুটকেস থেকে আইনি নোটিশের অনুলিপি এবং একটি চেকের কপি দেখিয়ে বলেন, এনামুল হক কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্রথমে এই চেক দেন। কিন্তু পরে টিটি করে ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ২৫ লাখ টাকা) পাঠালেও কোম্পানিটিকে বাকি সোয়া কোটি টাকা দেননি। ফলে কোম্পানিটির অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা এনামুল হককে এ বিষয়ে একটি আইনি নোটিশও দিয়েছেন।
এসব বিস্তারিত তথ্য তিনি কীভাবে জেনেছেন, প্রশ্ন করা হলে প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘আমার কাছে যে কেউ এলে আমি তাঁর উপকার করি। সেটাই আমার কাল হয়েছে। ডেনিমের (ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ) মালিক আমার পরিচিত, তাঁরা আর্থিক সমস্যায় পড়লে আমি এনামুল হককে সেখানে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে যোগাযোগ করিয়ে দিই। আর এনামুল হকের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করে তাঁর ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সেই তথ্য জানিয়েছি। এর বাইরে আমার কোনো যুক্ততা নেই। সচিব হিসেবে কোনো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমি হতে পারি না। এ সবকিছু বানোয়াট, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ।’
এদিকে গত ২৫ জুলাই প্রশান্ত কুমারের আইনজীবী বাসুদেব গুহ এনামুল হকের আইনি নোটিশের একটি জবাব দিয়েছেন। তাতে তিনি এনামুল হকের পাঠানো আইনি নোটিশের মাধ্যমে প্রশান্ত কুমারের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, এই মানহানিকর নোটিশ পাঠানোয় প্রশান্ত কুমারের পাঁচ কোটি টাকা সমমূল্যের মানহানি ঘটেছে। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মাথায় ওই টাকা না দিলে আইনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই আইনি নোটিশে এনামুল হক তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় একটি এনজিওর কর্মকাণ্ডের আড়ালে জেএমবি তৎপরতায় মদদ দেন বলেও অভিযোগ তোলেন সচিব।
এদিকে গত ২৫ জুলাই ড. রিয়াজ শহীদ নামের আরেকজন এনামুল হককে আরেকটি আইনি নোটিশ দেন। তাতে রিয়াজ শহীদ বলেন, ‘কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ও ডেনিম এক্সপোর্ট প্রসেসিং লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নেয়ামুল বশিরের সঙ্গে এনামুল হকের পরিচয় হয় “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের কক্ষে। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁকে কোম্পানিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি দেড় কোটি টাকা সময়মতো বিনিয়োগ না করায় কোম্পানির দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিনিয়োগকৃত টাকা বাদে বাকি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে নেয়ামুল বশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি সচিব প্রশান্ত কুমারের মাধ্যমে এনামুল হকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি তাঁর ওই কোম্পানি ড. রিয়াজ শহীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এনামুল হকের সঙ্গে তাঁদের চুক্তিপত্র ও দায়দেনার হিসাব নতুন কোম্পানিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা দায়দেনা আদায়ের অংশ হিসেবে ওই আইনি নোটিশ দিয়েছেন। চুক্তিপত্রের কোনো অনুলিপি তাঁর কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে নেয়ামুল বশির বলেন, ‘আমি এগুলো সংরক্ষণ করিনি।’
ড. রিয়াজ শহীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, চুক্তির কোনো কপি তাঁর কাছে নেই। বিনিয়োগের চুক্তি না থাকলে কীভাবে টাকা আদায়ের জন্য এনামুল হককে আইনি নোটিশ দিলেন, এই প্রশ্ন তুললে কোম্পানিটির নতুন এই মালিক বলেন, ‘আমরা কোম্পানিটি কেনার পর সব কাগজপত্র এখনো বুঝে নিইনি। চুক্তির কাগজ আছে কি না, তা ফাইল চেক করে বলতে হবে।’