Thank you for trying Sticky AMP!!

সমিতির নামে টাকা নিয়ে চম্পট

স্থানীয় সমবায় সমিতির সদস্যদের জমানো টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন সড়ক অবরোধ করেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধলপুরে।

তাঁদের কেউ ভ্যানচালকের স্ত্রী, কেউ গৃহিণী, কেউবা বাসাবাড়িতে ঝাড়মোছের কাজ করেন। আছেন অবস্থাপন্ন মানুষেরাও। কষ্টে অর্জিত টাকা লাভের আশায় তাঁরা জমা করেছিলেন রাজধানীর ধলপুরের স্থানীয় এক সমবায় সমিতিতে। কেউ এককালীন টাকা দিয়ে মাসে মাসে লাভ নিচ্ছিলেন, কেউবা মাসে মাসে টাকা জমা করছিলেন এককালীন লাভের আশায়। কিন্তু তাঁদের সেই আশায় এখন ‘গুড়েবালি’। সমিতির মূল ক্রীড়নকই পরিবার নিয়ে পালিয়েছেন। সঙ্গে গেছে টাকাও।

টাকার দাবিদার এমন কয়েক শ নারী গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই অবরোধ, তৈরি হয় যানজট। এ সময় তাঁরা নিজেদের টাকা উদ্ধারে ‘স্বনির্ভর সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের’ প্রতিষ্ঠাতা মো. খোরশেদুল কবিরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, খোরশেদুল পালিয়ে গেছেন জানতে পেরে তাঁরা যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের মামলা নেয়নি।

খোরশেদুল কবির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোরশেদুল কবির গণপূর্ত অধিদপ্তরের স্টেনোটাইপিস্ট পদে চাকরি করেন। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক করেছেন। দুই সন্তানের এই জনক ধলপুরে ফরিদাবাদে তাঁর পরিবার ও ভাইবোনের সঙ্গে পৈতৃক বাড়িতে থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। চাকরির পাশাপাশি প্রায় ১৯ বছর ধরে এলাকায় তিনি এই সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সমিতির কমিটিতে নানাজনকে পদবি দিলেও মূলত পরিচালনা করতেন তিনিই।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে গেলে ভুক্তভোগীরা তাঁদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, সমিতিতে প্রায় ২ হাজার ৮০০ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩৪ জনের পাওনার তালিকা করে ৫২ কোটি ৭০ লাখ টাকার হিসাব পেয়েছেন। সব সদস্যের পাওনার টাকার পরিমাণ জানা গেলে এই টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যাবে।

সমিতির সদস্য জাকিয়া বেগম জানান, তাঁর স্বামী একজন ভ্যানচালক। ২০১৮ সাল থেকে সমিতিতে তাঁরা টাকা জমাচ্ছেন। দুটি সঞ্চয়ে
৫৭ হাজার ২০০ টাকা জমা হয়েছে। লাভসহ ৭৪ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো টাকাই তাঁরা পাননি।

মতিঝিলে এক আইনজীবীর অফিস ঝাড়মোছের কাজ করেন মমতাজ বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সমিতিতে মাসে মাসে ৬০০ টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। লাভের টাকাও পাওয়া শুরু করেছিলেন। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন। এখন লাভ তো দূরের কথা, মূলধনেরই বাকি ১০ হাজার টাকা বকেয়া রয়ে গেছে।

আফরোজা নামের এক ভুক্তভোগী জানান, খোরশেদুল কবিরের প্রতি যাত্রাবাড়ী থানা–পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। মামলা
করতে তারা দুই দিন থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা না নিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস উদ্দিনকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলেন। এরপর আব্বাস দুই দিন এসেছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের সঙ্গে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেননি।

মুঠোফোনে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এসআই আব্বাস উদ্দিন জানান, মামলা না নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। ওসি তাঁকে ঘটনা খতিয়ে দেখতে যেতে বলায় তিনি গিয়েছিলেন। খোরশেদুল কবিরের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেমনটা শুনেছেন, আমরাও তেমনটা শুনেছি।’

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদল সরদার বলেন, খোরশেদুল কবিরের বেশভূষা অত্যন্ত ধার্মিক মনে হতো। সেই লোক এত মানুষের টাকা নিয়ে যে উধাও হয়ে যাবে, তা তাঁরা ভাবতেই পারেননি।

খোরশেদুল কবিরের দুটি মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হয়েছিল। গতকাল সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর ভাই মো. খায়রুল কবির জানান, খোরশেদুল বেশ কিছুদিন ধরে মোহাম্মদপুরে তাঁর নানাশ্বশুরের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চলে যান। আত্মীয়স্বজনের কাছে খোঁজ নিয়েও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর দাবি, ভাইয়ের সমিতির বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানেন না। তাঁর সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব ধরনের সহায়তা করছেন।