Thank you for trying Sticky AMP!!

সুনামগঞ্জে বাড়িতে বসে সাজা ভোগ করবে ১৪ শিশু

আদালত

সুনামগঞ্জে নানা অভিযোগে পৃথক ১০টি মামলায় আসামি ছিল ১৪ শিশু। এসব মামলার রায়ে তাদের প্রত্যেকের এক বছরের সাজা হয়েছে। কিন্তু এই শিশুরা কারাগার বা সংশোধনাগারে নয়, সাজা ভোগ করবে নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকে। এই সময়কালে তাদের সাতটি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা।

সুনামগঞ্জের শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন বুধবার দুপুরে আসামি, তাদের অভিভাবক ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এসব মামলায় ব্যতিক্রমী এই রায় ঘোষণা করেন। দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ এবং ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৩৪ (৬) ধারায় আদালত এই রায় দিয়েছেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নান্টু রায়।

বিচারক রায়ে সাজা ভোগের সময় যেসব শর্ত পালনের কথা উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো—বাবা-মায়ের আদেশ মানা, তাঁদের সেবা করা, ধর্মীয় অনুশাসন মানা ও নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেককে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো।

শিশুদের নিয়ে এমন রায় দেওয়ার সময় আদালত উল্লেখ করেছেন, শিশুরা যাতে পারিবারিক বন্ধনে থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সেটির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। জীবনের শুরুতেই যাতে শাস্তির কালিমা তাদের স্পর্শ না করে সে জন্য এমন সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধনাগারে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধে আটক থাকাদের সংস্পর্শে এসে অপরাধী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া সংশোধনাগারের ওপর চাপ কমানোও এমন রায়ের একটি কারণ। সব মিলিয়ে শিশুদের সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি ভাবা হয়েছে।

দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ আইনের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী, আগে দণ্ডিত হয়নি এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে আদালত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এমন রায় দিতে হবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রবেশনে দেওয়া এসব শিশুর বিরুদ্ধে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে টাকা গ্রহণ, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একজনের ছবির সঙ্গে অন্যের ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে অশ্লীল ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, শ্লীলতাহানি, মাদক রাখা, জুয়াখেলা, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও আসামি পলায়নে সহযোগিতা করা এবং মারামারির অভিযোগ ছিল।

মামলার রায় ঘোষণার পর এক শিশুর বাবা বলেন, ‘এইভাবে রায় হতে পারে সেটা আমি চিন্তাও করতে পারিনি। কী থেকে কী হয় ভয়ে ছিলাম। রায় শুনে আমি খুশি। ছেলে যাতে প্রতিটি শর্ত যথাযথভাবে পালন করে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো অপরাধে না জড়ায় পরিবারের সবাই সেদিকে খেয়াল রাখব।’

রায় হওয়া একটি মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী রুহুল তুহিন বলেন, ‘এই রায় একটি দৃষ্টান্ত। এতে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের শিশুরা পরিবার থেকেই নিজেকে গড়ার শিক্ষা পায়। আদালত তাদের সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথ দেখিয়েছেন।’

জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেছেন, ‘প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটির তত্ত্বাবধান করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা, পাশে থাকা। তিন মাস পরপর আদালতে এই বিষয়ে আমাকে প্রতিবেদন দিতে হবে। প্রবেশনের মেয়াদ শেষ হলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’

এইভাবে রায় হতে পারে সেটা আমি চিন্তাও করতে পারিনি। কী থেকে কী হয় ভয়ে ছিলাম। রায় শুনে আমি খুশি।
রায় শুনে এক শিশুর বাবা

দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ আইনের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী, আগে দণ্ডিত হয়নি এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে আদালত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এমন রায় দিতে হবে।