Thank you for trying Sticky AMP!!

সৈকতের ঝাউগাছ কেটে ঘর

>

* রাতের বেলায় ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি।
* বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশ।
* গাছ কাটার পর জমিও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
* হুমকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় জনপদ।

ঝাউবাগান কেটে ফাঁকা জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। অরক্ষিত হয়ে পড়ছে উপকূল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়ার ঝাউবাগানে l ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সৈকতের ঝাউগাছ নিধন করে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ চলছেই। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে রাতের বেলায় ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি। গাছ কাটার পর সেখানকার জমিও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় জনপদ।

এদিকে ঝাউগাছের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়টি দীর্ঘ সাত মাস ধরে বন্ধ। চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী কার্যালয়টি পাহারা দিলেও বিশাল ঝাউবাগান দেখার কেউ নেই।

মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক বলেন, কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের আওতায় প্যারাবন আছে প্রায় ২৪ হাজার ২৯৬ একর। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৪৩ একর প্যারাবন। বেদখলে চলে গেছে ৪ হাজার ১০০ একর। প্রায় ৫০০ জন দখলদারের বিরুদ্ধে ৬৯টি মামলা করেও বেদখলে থাকা প্যারাবন উদ্ধার করা যাচ্ছে না। কারণ লোকবলের সংকট।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের সৈকতের সমিতিপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল ঝাউবাগানের ৮০ শতাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার পর খালি জায়গায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনকর্মীদের যোগসাজশে ঝাউগাছ কাটার সঙ্গে জড়িত আছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এদের মধ্যে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মো. বাবুল ও মোস্তাক আহমেদ নামের দুজনের নাম জানা গেছে। এরা একসময় বন বিভাগের কর্মচারী (ওয়াচার) ছিলেন। ঝাউবাগান পাহারা দিতেন তাঁরা। এখন ঝাউগাছ নিধনের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে গাছ কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেন মো. বাবুল ও মোস্তাক আহমেদ। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, এখন যেসব বনকর্মী ঝাউবাগান পাহারা দেন তাঁরাই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

সমিতিপাড়ার মতো সৈকতের পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়া, মোস্তাকপাড়া, বাশিন্যাপাড়ার ঝাউবাগানের ভেতরও গাছ কেটে তৈরি হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। নির্বিচারে গাছ নিধনের ফলে ঘন ও সারিবদ্ধ ঝাউবাগান এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়ায় গাছ কেটে ঝাউবাগানের ভেতর দোকান ঘর তৈরি করেন জাফর আলম (৫০) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী দিলুয়ারা বেগমের (৪৫) প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস আগে বন বিভাগের এক বিট কর্মকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তিন গন্ডা জমি কেনেন তাঁর স্বামী। এরপর দোকানটি নির্মাণ করা হয়। জমি কেনার আগে ২০-২৫টি ঝাউগাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। এখন দোকানের পাশে মাত্র তিনটি ঝাউগাছ আছে।

শহরের কস্তুরাঘাট বনবিট কর্মকর্তা সেলিম মিয়া ও বনকর্মী (ওয়াচার) মো. সেলিমও ঝাউগাছ নিধনের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বনকর্মী মো. সেলিম বলেন, ঝাউবাগানের ভেতরে যাঁরা বসতি করছেন, তাঁরা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার জলবায়ু উদ্বাস্তু। তাঁরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ঝাউবনে আশ্রয় নিয়েছেন। গাছ নিধনের সময় বাধা দিলে তাঁরা হামলা চালান। গত কয়েক দিনে গাছ কেটে অন্তত ১০টি বসতবাড়ি নির্মাণ হয়েছে।

কস্তুরাঘাট বনবিট কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, ঝাউবাগান উন্মুক্ত হওয়ায় পাহারা দেওয়া কষ্টসাধ্য। সেখানে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ঝাউগাছ নিধনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

সাত মাস বন্ধ সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়: ঝাউবাগান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়টি বন্ধ আছে দীর্ঘ সাত মাস ধরে। জাবেদ ইকবাল নামের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কার্যালয়টি দেখভাল করছেন।

জাবেদ ইকবাল বলেন, কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক জিএম কবির পদোন্নতি পেয়ে ২০১৭ সালের ৩১ মে অন্যত্র চলে গেছেন। এরপর আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। এখন চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোসাইন এই কার্যালয় দেখাশোনা করছেন। ফলে ঝাউবাগানসহ ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় প্যারাবন রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, চট্টগ্রামের পাশাপাশি কক্সবাজারসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ কারণে কক্সবাজারে সার্বক্ষণিকভাবে থাকা হচ্ছে না। কক্সবাজারের জন্য রাজেশ চাকমা নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় যোগ দিতে পারছেন না।