Thank you for trying Sticky AMP!!

হাসপাতালে 'পর্দা কাণ্ডে' ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধভাবে প্রাক্কলন ব্যতীত উচ্চমূল্যে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার সকালে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

এ মামলায় ঠিকাদার ও চিকিৎসকসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গণপতি বিশ্বাস, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মিনাক্ষী চাকমা, সাবেক প্যাথলজিস্ট এ এইচ এম নুরুল ইসলাম, অনিক ট্রেডার্সের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন, আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সী ফররুখ হোসাইন ও ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন।

হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক মারা যাওয়ায় তাঁকে আসামি করা হয়নি

এই ছয়জনের নামে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৪০৯ , ৫১১, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)–এর ধারায় মামলা হয়েছে।

ফরিদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে আইসিইউ না থাকলেও সেখানকার জন্য অন্তত ৪০ গুণ বেশি দামে রোগীকে আড়াল করে রাখার ওই এক সেট পর্দা কেনা হয়েছে।

২০১৪ সালে ফরিদপুর মেডিকেলের জন্য অনিক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি কার্যাদেশের মাধ্যমে ১০টি পণ্য সরবরাহের জন্য ১০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় ওই সব সরঞ্জামের দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি ধরে ১০ কোটি টাকা বিলও জমা দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় বিল অনুমোদন না করায় তা আটকে যায়।

ওই সব সরঞ্জাম সরবরাহের পর যে বিল জমা দেওয়া হয়, এতে আইসিইউতে ব্যবহৃত একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়। একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, একটি হেড কার্ডিয়াক স্টেথিসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান তিনটির মালিক তিন ভাই। ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসাইন মূলত প্রতিষ্ঠান তিনটি চালান। তাঁর দুই ভাই মুন্সী ফররুখ হোসাইন ও আবদুল্লাহ আল মামুনের নামে প্রতিষ্ঠানগুলো চালানো হয়। কাগজ–কলমে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিলেও মুন্সী সাজ্জাদই ছিলেন ওই টেন্ডারের মূল নিয়ন্ত্রক। তিনিই সিন্ডিকেট করে সাজানো দরপত্র দাখিল করেন।

ফরিদপুর মেডিকেলের ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক খান (বর্তমানে মৃত) শিডিউলভুক্ত সরঞ্জাম কেনা ও বাজার যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দন্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গণপতি বিশ্বাসকে সভাপতি এবং গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মিনাক্ষী চাকমা ও প্যাথলজি বিভাগের এ এইচ এম নুরুল ইসলামকে সদস্য করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। তিনটি দরপত্রের মূল্য যাচাই করে কমিটি প্রতিবেদনও জমা দেয়। তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি ওই দর গ্রহণ করার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা হিসেবে অনিক ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর অনিক ট্রেডার্স ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মালামাল সরবরাহ করে এবং ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার দুটি বিল মিলিয়ে ১০ কোটি টাকার বিল জমা দেয়।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য যৌক্তিক কারণ এবং চাহিদা (প্রয়োজন) ছাড়াই সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেন। কমিটির সদস্যরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে দর যাচাই ছাড়াই তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে ভুয়া দর দেখিয়ে ওই সব সরঞ্জামের উচ্চমূল্য দেখিয়ে বাজার প্রতিবেদন জমা দেন। বাজারদর কমিটির মাধ্যমে মেডিকেল যন্ত্রপাতির অতিমূল্যায়ন, সরকারি আর্থিক ক্ষতি করে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ঠিকাদার সিন্ডিকেট উচ্চমূল্যে দরপত্র দাখিল ও কার্যাদেশ নেন। হাসপাতালের জন্য অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা ও কেনাকাটার নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ১০টি আইটেম কেনা দেখিয়ে সরকারের ১০ কোটি টাকা ক্ষতির চেষ্টা করেছে। আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। এ কারণে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়ে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।

এর আগে এ ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত মুন্সী সাজ্জাদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বিষয়টির সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। অনিক ট্রেডার্সের মালিক তাঁর ভাই হলেও তিনি এর সঙ্গে যুক্ত নন। দুদক কেন তাঁকে আসামি করেছে, বুঝতে পারছেন না মন্তব্য করে সাজ্জাদ বলেন, সবকিছু আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে।