Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রলীগ কর্মীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগ কর্মীর জন্মদিনের কেক কাটার অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তাঁকে মারধরের ঘটনায় চবি শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয়ের তিন কর্মী জড়িত। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না গেলে তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।

মারধরের শিকার সাংবাদিকের নাম রিদওয়ান আহমদ। তিনি একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি অনলাইন পোর্টালের চবি প্রতিনিধি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

Also Read: চবিতে আবার ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, লাঠিসোঁটা–রামদা নিয়ে মহড়া

মারধরের ঘটনায় গতকাল রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রিদওয়ান। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

রিদওয়ান এ এফ রহমান হলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকেন। হল সূত্র জানায়, গতকাল বিজয়ের কর্মী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামের জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে বিজয়ের নেতা-কর্মীরা কেক কাটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। রাত ১১টার দিকে কেক কাটতে নেতা-কর্মীরা হলের ফটকের সামনে জড়ো হন। এর মধ্যে কয়েকজন এসে রিদওয়ানকে ছাত্রলীগের সব অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি অংশ নিতে বলেন।

ছাত্রলীগের কর্মীদের ভাষ্য ছিল, রিদওয়ান যেহেতু হলে থাকছেন, তাই তাঁকে তাঁদের (ছাত্রলীগ) সব কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। তা না হলে তাঁকে হল থেকে চলে যেতে হবে।

Also Read: ১০ ঘণ্টা পর চবি ছাত্রলীগের অবরোধ স্থগিত

রিদওয়ান কেক কাটার অনুষ্ঠানে যাননি। হল সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে রিদওয়ানের কক্ষে যান বিজয়ের কর্মী লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আরশিল আজিম, একই বর্ষের নাট্যকলা বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শোয়েব আতিক। তিনি কেন কেক কাটার অনুষ্ঠানে যাননি, তাঁরা তার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে আরশিলের নির্দেশে রিদওয়ানকে মারধর করেন শোয়েব। এ সময় তাঁরা রাতের মধ্যেই তাঁকে হল থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

জানতে চাইলে রিদওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেক কাটার অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। ছাত্রলীগের তিন কর্মীর মধ্যে আরশিল এসে আমাকে বলেন, “তুই যে ছাত্রলীগের ফাংশনে যাস না, তোকে মারলে তখন কে দেখবে?” তখন আমি বলি, “আমাকে কেন মারবে? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।” এ কথা বলতেই শোয়েবকে আরশিল বলেন, “এই ওরে মার।”’

রিদওয়ান বলেন, আরশিলের নির্দেশ পাওয়ামাত্র তাঁকে কিল-ঘুষি-চড়-থাপ্পড় দেন শোয়েব। বিষয়টি তিনি (রিদওয়ান) বিজয়ের নেতা আল আমিনকে ফোনে জানান। আল আমিনকে বিষয়টি কেন জানালেন, সেই কারণে তাঁকে আরেক দফায় মারধর করেন শোয়েব।

মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আরশিল ও শোয়েবের মুঠোফোনে কল করা হয়। তাঁরা এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে তাঁদের একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি।

অন্যদিকে আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আরশিল ও শোয়েবের সঙ্গে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু কাউকে মারধর করেননি। হুমকি দেননি। যা করার আরশিল ও শোয়েব করেছেন।’

বিজয়ের নেতা আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, রিদওয়ান ফোন দিয়ে তাঁকে বিষয়টি জানিয়েছেন। মারধরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি আন্তরিক।

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক কেন, সাধারণ শিক্ষার্থীকেও মারধরের অধিকার কারোর নেই। যাঁরা মারধরের ঘটনায় জড়িত, তাঁরা কেউই ছাত্রলীগের পদে নেই। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে যেন তাঁরা ছাত্রলীগের কোনো পদে না আসেন, সে বিষয়টি দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় তাঁরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগটি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষে আছেন সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা। আরেকটি পক্ষে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীরা। এই দুটি পক্ষের মধ্যে আবার ১১টি উপপক্ষ আছে। এর মধ্যে বিজয় ও সিএফসি মহিবুলের অনুসারী। বাকি ৯টি উপপক্ষ নাছিরের অনুসারী।