Thank you for trying Sticky AMP!!

অভাবের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে প্রবীণ জেলেদের

ষাটোর্ধ্ব প্রবীণেরা এখনো যুবকদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যান। অভাবের কারণেই তাঁরা এমন কঠোর পরিশ্রম করছেন।

সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও বিশ্রাম নেই জেলে মো. ইয়াছিনের। সংসারের খরচ জোগাতে এখনো নদীতে মাছ ধরেন তিনি। বুধবার ভোলার নাছিরমাঝি মাছঘাট এলাকায়

করোনাকালে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে সব শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের ওপর। দীর্ঘ কয়েক মাস ঘরবন্দী থাকার পর অনেকেই কর্ম হারিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে তাঁদের পরিবারেও। বাদ যাননি বয়স্ক সদস্যরা। যাঁরা করোনা মহামারির আগেও সন্তানদের আয়ের ওপর নির্ভর করতেন পরিবারের আয় না থাকায়, তাঁরাও এখন কাজে নেমে পড়েছেন।

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের গঙাকৃর্তি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আলমগীর হোসেনও (৬৭) তাঁদের একজন।

আলমগীর হোসেন ডায়াবেটিসের রোগী। অন্যান্য রোগও আছে। ঘাড়, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা। চোখেও দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পান না। এরপরও মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। গতকাল বুধবার ভোরে মাছ বিক্রি করতে এসেছিলেন উপজেলার নাছিরমাঝি মাছঘাটে। আড়তদারের বাক্সে মাছ ঢেলে রীতিমতো কাঁপছিলেন তিনি। কথা বলতে গেলে জানান, ঠিকমতো নামাজে দাঁড়াতে পারেন না। চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে হয়। প্রতিদিন ৩০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয় তাঁকে। ছোট ছেলে ঢাকায় কাজ করতেন। বেকার হয়ে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাকি তিন ছেলে সংসার নিয়ে আলাদা। তাই নিজের খরচ চালাতে এই বয়সেও নদীতে জাল টেনে মাছ ধরতে হচ্ছে তাঁকে।

নাছিরমাঝি মাছঘাটে এমন আরও কয়েকজন জেলের দেখা মিলল। তাঁরা সবাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নদীতে মাছ ধরতে যান।

প্রবীণ জেলেদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ, বয়স্ক ভাতাসহ নাগরিক সুবিধা দেওয়ার দাবি করে আসছেন তাঁরা।
নুরুল ইসলাম, ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির সভাপতি

নাছিরমাঝি মাছঘাটেই থাকেন জেলে মো. ইয়াছিন (৭৫)। পাঁচবার তাঁর বাড়ি ভেঙে গেছে। ছেলেমেয়েরা সবাই নিজেদের সংসার নিয়ে আলাদা। স্ত্রী থাকেন তাঁর সঙ্গে। দুজনের খরচ চালাতেই মাছ ধরার কাজ করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্যের নৌকায় কাজ করে দিনে ২০০–২৫০ টাকা আয় হয়। অনেক দিন শূন্য হাতেও ফিরে আসেন। তখন ধারের টাকায় খাবার কিনতে হয়।

মো. ইয়াছিন বলেন, ‘রতে (শরীর) খাডি, প্যাডে খাই। নদীত অভিযান থাকলে রাজের জোগালি (রাজমিস্ত্রি) দেই। রোগশোগ থাইকলেও নাই। দুই বেলা পেট ভরি ভাত দুগা পাইলে, আল্লার শুকুর। জানি, কেউ আউগ্গাই আইতো নো।’

মো. ইয়াছিন এই বয়সে এসে বুঝতে পেরেছেন, তাঁকে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ সাহায্যের নেই। তাই সৃষ্টিকর্তার ওপর যত ভক্তি, সংসারের মানুষের ওপর ততই অভিমান।

ভোলার সাত উপজেলার বিভিন্ন মাছঘাটের প্রবীণ জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই গরিব-অসহায়। নিজের সংসারের খরচ জোগাড় করতে এই বয়সে এসে উত্তাল নদীতে মাছ ধরতে হচ্ছে। মনপুরা রামনেওয়াজ ঘাটের সফিক মাঝি (৭৬) বলেন, ‘সরকারি অফিসারগো অবসর আছে, আমগো অবসর মরণের পর।’

ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রবীণ জেলেদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ, বয়স্ক ভাতাসহ নাগরিক সুবিধা দেওয়ার দাবি করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু দাবি পূরণ দূরের কথা, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চালও সঠিকভাবে মিলছে না।

ভোলা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় প্রায় ৬৩ হাজার লোককে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবীণদের জন্য আর কোনো সুবিধা নেই। তবে গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি বেসরকারি সংস্থা প্রায় তিন হাজার প্রবীণ ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করছে।