Thank you for trying Sticky AMP!!

‘আঁতাত প্রকাশ্যে বা দিনে হয় না, হয় গভীর রাতে ও অতি গোপনে’

মো. শাহিন

মো. শাহিন কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর বিএনপির সভাপতি। ২০১১ সালে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তিনি জয় পান। তবে হেরে যান পরের নির্বাচনে। আসছে নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী হতে মরিয়া। একটি ঘটনার সূত্র ধরে বিএনপির এই নেতাকে নিয়ে ভৈরবের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব মহলে এখন আলোচনা হচ্ছে। ছয় দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইস্যুটি নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। বিশেষ করে নিজ দলে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৭০০ সদস্যের বহর ১০ অক্টোবর সিলেটে হজরত শাহজালাল ও শাহ পরান (র.)-এর মাজার জিয়ারত করতে যায়। তখন সিলেটে এই আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন শাহিন। বিপরীত মতাদর্শের সঙ্গে তাঁর এই সৌজন্যসাক্ষাৎ নিয়েই এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। তবে শাহিনের অনুগতরা মনে করেন, সামাজিকতাকে ভুল ব্যাখ্যায় সামনে আনা হচ্ছে এবং দলীয় মেয়র প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে ইস্যুটিকে হাতিয়ার বানানো হচ্ছে।
ওই সৌজন্যসাক্ষাতের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের মন্তব্য, ‘ক্ষমতাসীনের রোষানলে পড়ে আমাদের অনেকে মামলার আসামি। এই পরিস্থিতিতে তিনি (মো. শাহিন) ওই সৌজন্য না দেখালেও পারতেন।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শাহিনের সঙ্গে। ঘটনাটি স্পষ্ট করতে তাঁকে ফেসবুক লাইভে এসে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। তাতেও ঘোলাটে পরিবেশে স্বচ্ছতা ফেরেনি। শাহিন বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে সিলেট আছি। খুব কম দিনই আছে ভৈরবের কারও সঙ্গে সামাজিকতা করতে হয় না। শনিবার যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা একটি দলের হলেও আমার কাছে মনে হয়েছে প্রিয় ভৈরব থেকে এসেছেন।’

সমালোচনার পেছনে তিনি নিজ দলের একাংশকে দায়ী করে বলেন, পৌর নির্বাচনে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, আঁতাত প্রকাশ্যে কিংবা দিনে হয় না। হয় গভীর রাতে, নীরবতায় ও অতি গোপনে।


দলীয় সূত্রে জানা যায়, শাহিনের রাজনীতির শুরু কলেজজীবনে ছাত্রদলের একজন সমর্থক হিসেবে। ১৯৮৬ সালে তিনি ভৈরব ছেড়ে সিলেটে সপরিবারে স্থায়ী হন। সেখানে তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ভৈরবের রাজনীতিতে ফেরা ২০০৫ সালের শেষের দিকে। তখনকার তাঁর রাজনীতি ও যোগাযোগ ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় সমর্থন চেয়েও পাননি। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে জয় পান। পরের বার ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফখরুল আলমের কাছে ১০ হাজারের অধিক ভোটে হেরে যান তিনি। তবে ওইবার ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দুপুর ১২টার দিকে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবারও তিনি এখন পর্যন্ত দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সরব রয়েছেন।

এদিকে তারিখ ঘোষণা না হলেও ভৈরবে পৌর নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। এই রকম এক সময়ে আওয়ামী লীগের বিশাল বহরের সিলেট সফর নির্বাচনী পরিবেশে বিশাল প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সায়দুল্লাহ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ১০ অক্টোবর বেলা আড়াইটার দিকে বহরের সদস্যরা গন্তব্যে পৌঁছান। ওই সময় শাহিন নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন ও নিজের পক্ষ থেকেও হালকা নাশতা করান।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বসে ভোজের স্থিরচিত্র মুহূর্তে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই বিতর্কের শুরু। কেউ কেউ সাক্ষাৎকে ক্ষমতাসীনের সঙ্গে শাহিনের আঁতাত হিসেবে দেখছেন। শুধু তা-ই নয়, এই সময়ের মধ্যে দল থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে অনেকে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তবে এই প্রচারণার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন মজিবুর। তিনি সৌজন্যকেও দেখছেন ইতিবাচকভাবেই।

মজিবুর বলেন, ‘বিপরীত রাজনীতির কারও সঙ্গে সামাজিকতা করা যাবে না, এমন ভাবনায় আমি বিশ্বাসী নই।’
এদিকে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা আছে আওয়ামী লীগের ঘরেও। সাক্ষাৎ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় নজর রয়েছে তাদেরও। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘ওই দিন আমাদের সঙ্গে কেবল বিএনপির নেতা দেখা করেছেন, এমন নয়। সিলেটে অবস্থান করা ভৈরবের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকে এসেছেন। এই নিয়ে এর চেয়ে বেশি ভাবার অবকাশ থাকার কথা নয়।’