Thank you for trying Sticky AMP!!

আজও ১০ গ্রামের ভরসা সাঁকো

এই সাঁকোই ভরসা অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। ১ এপ্রিল সরাইলের রানিদিয়া গ্রামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আজও ভরসা বাঁশের সাঁকো। উপজেলার অরুয়াইল বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছেত্রা নদী। সেখানে সেতু না থাকায় দুর্ভোগের অন্ত নেই কৃষিনির্ভর এই এলাকার মানুষের। তাঁরা শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে বাঁশের দীর্ঘ সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন। এর ওপর দিয়ে পারাপার চলে বছরের সাত মাস।

উপজেলার রানিদিয়া গ্রামের কাছে রয়েছে এই বাঁশের সাঁকো। সাঁকো তৈরির উদ্যোক্তাদের একজন রানিদিয়া গ্রামের নূর ইসলাম (৬০)। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে তাঁরা কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে এখানে তৈরি করেছিলেন বাঁশের সাঁকো। এরপর থেকে তাঁরা প্রতিবছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে কয়েক লাখ টাকার বাঁশ, বেত, রশি ও গুনা দিয়ে সাঁকো তৈরি করে আসছেন। এই সাঁকো পারাপার হতে প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই টাকা করে নেওয়া হয়। জুনের মাঝামাঝিতে পানি বৃদ্ধির আগেই সাঁকো ভেঙে ফেলতে হয়। এই সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল পারাপার হলেও রিকশা বা পণ্যবাহী ভ্যান চলাচলের সুযোগ নেই। ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য ঘাড়ে-মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে থাকেন। প্রতিবছর সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।

এদিকে গত ২৯ মার্চের ঝড়ে সাঁকোটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৩০ মার্চ দিনভর ১০ গ্রামের মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে পারেননি। ওই দিন ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। এই সাঁকো দিয়ে যেসব গ্রামের লোকজন চলাচল করেন, তার মধ্যে রয়েছে অরুয়াইল ইউনিয়নের রানিদিয়া, অরুয়াইল, কাকুরিয়া, বনিয়ারটেক, রাজাপুর এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা, পরমানন্দপুর, ফতেহপুর, ষাটবাড়িয়া ও হরিপুর গ্রাম। এসব গ্রামে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস। গ্রামগুলোর মানুষের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র অরুয়াইল বাজার। অরুয়াইল বাজারে উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে ছেত্রা নদী পার হতে হয়। বাজারটিতে রয়েছে সহস্রাধিক দোকানপাট। অরুয়াইল বাজার ও আশপাশেই রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর।

সাঁকোর পর সাত কিলোমিটার মাটির ও আংশিক ইটের রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সেতুর না থাকায় বছরের কোনো সময়েই ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তিন মাস নৌকায় আর সাত মাস সবাইকেই হেঁটে বা মোটরসাইকেলে চড়ে যাতায়াত করতে হয়।

অরুয়াইল ইউপির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এলাকাবাসী এখানে সেতুর দাবি করে আসছে। কিন্তু এখনো সেতু হয়নি। ফলে মুমূর্ষু রোগী, প্রসূতি, নবজাতক ও বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েন এলাকাবাসী।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, অরুয়াইলে ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী নিলুফার ইয়াছমীন বলেন, ওই স্থানে সাঁকোর স্থলে ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি পাকা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে ও বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।