Thank you for trying Sticky AMP!!

কক্সবাজারে ‘নতুন জীবন’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আনন্দ উৎসব। আজ শুক্রবার দুপুরে।

আবর্জনায় জীবিকা খোঁজা শিশুদের এক বেলা ‘ঈদের আনন্দ’

সকালে যখন অন্য শিশুরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলে ছোটে, তখন ফরহাদ (১২) ছোটে অন্য গন্তব্যে। কাঁধে ব্যাগের বদলে থাকে প্লাস্টিক কুড়ানোর বস্তা। সারা দিন কাগজ আর প্লাস্টিক কুড়িয়ে দিন কাটে তার। সন্ধ্যায় সেই প্লাস্টিক বিক্রি করে নিজের মুখে আহার তোলে ফরহাদ। প্রকৃতির বুকে যখন অন্ধকার ভর করে, তখন ফরহাদের ঠিকানা হয় ফুটপাত অথবা মার্কেটের নিচে। ফরহাদের মা নেই, বাবা কোথায় মনেই পড়ে না তার।

কক্সবাজার শহরে ফরহাদের মতো ময়লা-আবর্জনার স্তূপ বা নালা-নর্দমায় জীবিকা খুঁজে বেড়ানো সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে দুই শতাধিক। তাদের কাছে এক বেলা ভালো আহার যেন স্বপ্নের মতো। এ রকম প্রায় ২০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু নিয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের পৌর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে ‘নতুন জীবন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুপুরে চলে ভূরিভোজ। এই এক বেলা তাদের আহারের চিন্তা নেই, তাই প্লাস্টিক কুড়ানোর প্রয়োজনও নেই। একসঙ্গে হইহুল্লোড়, আর নাচ–গানে মেতে ওঠে সবাই। ছেলে ও মেয়েশিশুদের জন্য আলাদা করে বিস্কুট দৌড়, বল চালানো, চেয়ার খেলাসহ আনন্দ উৎসবে ছিল নানা আয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আকতার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মুহিউদ্দিন ও শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াছমিন।

সুবিধাবঞ্চিত শিশু ফরহাদ বলে, ‘গরুর মাংস দিয়ে পেটপুরে খেয়েছি। আর সকাল থেকে সবাই মিলে বেশ মজা করেছি। প্লাস্টিক কুড়াতে আর ভালো লাগে না। আমরা চাই নতুন জীবনে ফিরতে, যেখানে আমরা অন্য শিশুদের মতো নিয়মিত স্কুলে যেতে পারব, খেলাধুলা করতে পারব।’

কক্সবাজারে ‘নতুন জীবন’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আনন্দ উৎসব। আজ শুক্রবার দুপুরে।

নতুন জীবন সংগঠনটি ২০১৪ সাল থেকেই পথশিশুদের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। পথশিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও মাঝেমধ্যে খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে থাকে তারা। সংগঠনের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, পথশিশুদের কারও মা নেই, কারও বাবা নেই বা অনেকের মা-বাবা উভয়ই নেই। কাগজ বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে যা আয় হয়, সেগুলো বিক্রি করেই জীবিকার সংস্থান করে তারা। এই পথশিশুরা কিন্তু অন্য শিশুদের মতো ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারে না। তাই তাদেরকে ঈদের আনন্দ দিতে এই আয়োজন করা হয়েছে। শিশুরা খুব খুশি হয়েছে। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমন শর্মা বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৪ সালে ৯ জন সংবাদকর্মী সংগঠনটি দাঁড় করান। এখন স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ৩৪। আর সংগঠনে নিবন্ধিত পথশিশু রয়েছে ২১০ জন। পথশিশুদের প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার পৌর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয়। প্রতি ঈদে তাদের নতুন জামা ছাড়াও তাদের নিয়ে বার্ষিক পিকনিক, স্বাস্থ্যসেবা, মাঝেমধ্যে ভালো খাবার পরিবেশনসহ নানা আয়োজন করা হয়।