Thank you for trying Sticky AMP!!

‘আসামিরা সবাই খালাস পেলেন, এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না’

প্রতীকী ছবি

নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলায় সাক্ষ্য দেননি তদন্ত কর্মকর্তা। স্থানীয় সাক্ষীরাও বাদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেননি। ফলে ১৬ বছর পর এ মামলায় রায়ে জীবিত ১৩ জন আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন।
গতকাল বুধবার এ মামলার রায় হয়েছে। মামলার বাদী নিহত দীপঙ্করের বাবা দিজেন্দ্রনাথ সাহা (৭৫) বলেন, দিনদুপুরে সবার সামনে তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হলো, আর আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে গেলেন। এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না।
দীপঙ্কর সাহার বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামে। দীপঙ্করের ছোট ভাই দীপ শঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯-২০ বছর। ভাই বাবাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। আর আত্রাই নদের খেয়াঘাটের টোল আদায় করতেন। কারও সঙ্গে তাঁদের পরিবারের কোনো শত্রুতা ছিল না। তাঁর ভাইকে বাংলা ভাইয়ের লোকেরা প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে যান। তাঁরা ভাইকে পেটাতে পেটাতে বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাঁদের সাক্ষ্য মানা হয়েছিল, তাঁরা সবাই ঘটনাটি দেখেছেন। কিন্তু আদালতে গিয়ে ভয়ে তাঁরা কেউ কথা বললেন না। তদন্ত কর্মকর্তা পর্যন্ত সাক্ষ্য দিলেন না। তদন্ত কর্মকর্তা ৩০ জন আসামির মধ্যে ১৮ জনের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনিই সাক্ষ্য দিতে এলেন না।

দীপ শঙ্কর আরও বলেন, প্রায় ২০-২২ জনকে মেরে ফেলার পর তাঁরাই বাংলা ভাইকে আসামি করে বাগমারা থানায় প্রথম মামলা করেছিলেন। এই মামলা করার কারণে জেএমবির লোকজনের ভয়ে তাঁর বোন আর তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। শুধু মা ও বাবা বাসায় থাকতেন। তবে তাঁদের মামলা করার পরই বাংলা ভাই এই এলাকা থেকে তাঁর আস্তানা গুটিয়ে নিতে থাকেন। অনেক ভয়ভীতির মধ্যে মা–বাবাকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
দিজেন্দ্রনাথ সাহা মুঠোফোনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সুধাসদনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। নেত্রী সব শুনে বলেছিলেন, ‘কাকাবাবু, ভেঙে পড়বেন না। আমিও পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। আমরা ক্ষমতায় গেলে দেখব। এই আমলে এসে বিচারের রায় হলো। সব আসামি ছাড়া পেয়ে গেল। এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।’
বাদীপক্ষে এই মামলা চালিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নিনা গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য একটা মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপক্ষ তাঁকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা এই মামলার রায়ে হতাশ হয়েছেন। তাঁরা আপিল করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর আগের ঘটনা। তদন্ত কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন। তাঁকে হাজির করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। তারপরও তিনি আসেননি। অন্য সাক্ষীরা কেউ বাদীর পক্ষে বলেননি। সবাই বলেছেন তাঁরা সেখানে ছিলেন না, দেখেননি, জানেন না—এই রকম। তিনি বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে প্রকাশ্য হত্যা মামলাটি প্রমাণ করা যায়নি।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত-১–এর বিচারক মোসা. ইসমত আরা এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার অভিযোগপত্রের মোট ১৮ আসামির মধ্যে বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হয়েছিল। আর চারজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। এই পাঁচজন এমনিতেই অব্যাহতি পেয়েছেন। আর জীবিত ১৩ জনকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন জেএমবির নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে তাঁদের বাগমারার হামিরকুৎসা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে দীপঙ্কর সাহাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।