Thank you for trying Sticky AMP!!

আহ্বায়কের ২২ সমর্থকের বিরুদ্ধে সাংসদ অনুগতের মামলা

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বর্তমান সাংসদ ও সাবেক সাংসদ পক্ষের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব এবার মামলায় গড়িয়েছে। সাংসদ নূর মোহাম্মদের নামে বিষোদ্‌গার ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে আজ রোববার সন্ধ্যায় মামলা করেছেন সাদেক হোসেন।

সাদেক হোসেন উপজেলার এগারসিন্ধুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। মামলার ২২ আসামির সবাই ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থক এবং বেশির ভাগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতা।

মামলার এজাহারের শুরুতে নিজেকে সাংসদ নূর মোহাম্মদের একজন অনুগত দাবি করেছেন বাদী সাদেক হোসেন। তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার বিকেলে সোহরাব উদ্দিন গ্রামের বাড়ি থেকে গাড়িযোগে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। তখন তাঁর অনুগতরা ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেলযোগে সোহরাব উদ্দিনকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন। ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পাকুন্দিয়ার ঘাটবাজার এলাকায় এসে তাঁরা নূর মোহাম্মদের নাম নিয়ে স্লোগান দেন। একই স্থানে বাদীসহ সাংসদ পক্ষের লোকজনকে পেয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে ককটেলসদৃশ পটকা ফুটিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। হামলায় বাদী আহত হন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয় এগারসিন্ধুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মিশু নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি সোহরাবের অনুগত ও ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। অন্য অভিযুক্তরা হলেন জেলা যুবলীগের সদস্য ফরিদ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. এখলাস, উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি মাহাবুব মিয়া, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরমিন, সাবেক সহসভাপতি সানি, মঠখোলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নাসির, উপজেলা যুবলীগের সদস্য আরিফুর রহমান, হাজী জাফর আলী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান, উপজেলা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি তুহিন, আ. রশিদ, হিমেল, আরমান, খায়রুল, মুর্শিদ, মল্লিক, তারেক হাসনাত বিজয়, লালু।
সাদেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সাংসদ দেশের একজন খ্যাতিমান মানুষ। তাঁর নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছিল সাবেক সাংসদ সোহরাবের লোকজন। তখন আমরা কয়েকজন প্রতিবাদ করছিলাম। সেই কারণে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাবেক সাংসদ সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর অনুগত মামলার ২ নম্বর আসামি ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘পাকুন্দিয়ার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। সেই কারণে সোহরাব ভাইকে বাইকযোগে এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসছিলেন। ঘাটবাজার এলাকায় আসামাত্র সাংসদ পক্ষ আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন আমরা কোনোরকমে নিজেদের রক্ষা করে বাড়ি ফিরে আসি।’ মামলার কথা জেনে তাঁর ভাষ্য, ‘মার ও মামলা দুই-ই আমরা খেলাম।’

পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন। সোহরাব উদ্দিনের বাড়ি পাকুন্দিয়ায়, আর নূর মোহাম্মদ কটিয়াদীর বাসিন্দা। সোহরাবকে হটিয়ে নূর মোহাম্মদ নৌকার টিকিটে সাংসদ হওয়ার পর দুজনের মধ্যে প্রথমে নীরব উত্তেজনা, পরে তা প্রকাশ্য রূপ পায়।

দলীয় সূত্র জানায়, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই প্রায় দুই যুগ। লম্বা সময় উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি। গেল বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এর ১০ মাস পর গত বৃহস্পতিবার সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করা করে জেলা কমিটি। ওই দিন আহ্বায়ক ছাড়া কমিটির আর কোনো সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এরপর থেকে সোহরাবকে আহ্বায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সাংসদ পক্ষ নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন, ২২ জনকে আসামি করে মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।