Thank you for trying Sticky AMP!!

ইংরেজি-গণিতে সর্বনাশ

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পাসের হার এবং জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমেছে। এবারের পাস হার ৮১ দশমিক ১৭। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৩১৫ শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৭৫। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৪ হাজার ১৩৫ জন।

এক বছরের ব্যবধানে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৫৮। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। গত বছর শতভাগ পাস করা স্কুল ছিল ১৯২টি, এবার তা কমে হয়েছে ৯০টি।

এর আগে ২০১৩ সালে জেএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৩। পাঁচ বছরের মধ্যে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায়ও সবচেয়ে ফল খারাপ হয়েছিল চট্টগ্রামে।
গতকাল শনিবার প্রকাশ হওয়া ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) পাসের হার কমে যাওয়া এবং ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে খারাপ ফল করায় সামগ্রিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে ফল খারাপ হওয়ার জন্য তাঁরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানপদ্ধতির দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন।

রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য এলাকায় বিষয়ভিত্তিক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংকট রয়েছে। দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক গণিত পড়ান। ইংরেজির ক্লাস নেন অন্য বিষয়ের শিক্ষক। একজন দক্ষ শিক্ষক তাঁর বিষয়ে যেভাবে পড়াবেন অন্য শিক্ষকেরা তা পারবেন না। স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি ও গণিত নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার শিক্ষার্থীরা। এবার ১ হাজার ২১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৪ জন।

গতবার গণিত বিষয়ে পাস করেছিল ৯৬ দশমিক ০৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এবার পাস করে ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৫৪। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে কৃতকার্য হয়েছে যথাক্রমে ৯৩ দশমিক ১২ ও ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই হার ছিল যথাক্রমে ৯৭ দশমিক ৩৬ ও ৯১ দশমিক ০৪।
গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির মোট পাসের হার নির্ভর করে বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। তিনি বলেন, এবার এই দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে বেশি শিক্ষার্থী। তিন পার্বত্য জেলায়ও পাসের হার কমে গেছে। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষকেরা দাবি করেছেন, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে। কিন্তু এটি কোনো কারণ হতে পারে না। বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেল করার অন্যতম কারণ শ্রেণিকক্ষে দুর্বল পাঠদানপদ্ধতি।

সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও পাসের হারে ছাত্রদের থেকে পিছিয়ে ছাত্রীরা। তবে জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ছাত্রীরা। ১ লাখ ৮৪৩ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার ৪৭৫ জন, পাসের হার ৮০ দশমিক ৯৭। অন্যদিকে ৮২ হাজার ৬৬৩ ছাত্রের মধ্যে পাস করে ৬৬ হাজার ৩৩৯ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৬০ ছাত্রী এবং ৪ হাজার ৩৫৫ ছাত্র।

পাসের হারে এগিয়ে কক্সবাজার, পিছিয়ে খাগড়াছড়ি

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে কক্সবাজার জেলায়। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৯০ দশমিক ৬১ শতাংশ। রাঙামাটিতে গতবার পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৩২ শতাংশ, এবার পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে পাসের হার কমেছে ২১ শতাংশ। এবারের পাসের হার ৬৮ দশমিক ১৭। গতবার এ হার ছিল ৮৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। বান্দরবানে গতবার ৮৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার করেছে ৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজ উদ্দিন বলেন, তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। যাঁরা আছেন তাঁদের অনেকেই দক্ষ নন। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও তেমন নেই।

বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে নৌবাহিনী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। ৫৯১ শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১৯ জন। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৩১১ শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েরও ৩১১ ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ২৮২ ছাত্র ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২৫৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

নৌবাহিনী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন ও বিদ্যালয় শাখার প্রধান সৈয়দ মুহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় ভালো ফল করা সম্ভব হয়েছে। ভালো ফলের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপারে কলেজ থেকে বিশেষ যত্ন নেওয়া হতো।