Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দিতে পাথর উত্তোলন ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান। আজ মঙ্গলবার বিকেলে

বিছনাকান্দিতে পাথর উত্তোলন বন্ধে অভিযান

সিলেটের সীমান্ত উপজেলা গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দিতে এবারের পাহাড়ি ঢলে নতুন করে সৃষ্টি হওয়া পাথরের স্তূপ থেকে চলছে পাথর উত্তোলন। ইজারাবিহীন বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর লুট বন্ধে মঙ্গলবার টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। এ সময় প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ৫০টি নিষিদ্ধ ‘বোমা মেশিন’ জব্দ করে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান চলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে। এতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৯) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও অংশ নেন। করোনা পরিস্থিতির পর এটিই প্রথম সাঁড়াশি অভিযান বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযানে ৫০টি বোমা মেশিন চালু অবস্থায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

ভারতের মেঘালয়ের রাজ্যের পরপর সাতটি পাহাড় বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত। এসব পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে একটি জলপ্রপাত থেকে পাহাড়ি ঝরনার জলধারা গোয়াইনঘাট দিয়ে প্রবহমান পিয়াইন নদে গিয়ে মিশেছে। বর্ষকালে এই জলধারার বাংলাদেশ অংশের বিছনাকান্দিতে পাহাড়-পাথর আর জলের প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। বর্ষা গড়িয়েও বছরের প্রায় ছয় মাস বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের যাতায়াত থাকে।

টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রায় এক কোটি টাকার মূল্যের ৫০টি নিষিদ্ধ ‘বোমা মেশিন’ জব্দ করে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, বিছনাকান্দি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও ২২৮ দশমিক ১৬ একর জায়গা পাথর কোয়ারি চিহ্নিত। বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন পাথর কোয়ারির ইজারা দেয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পাথর কোয়ারি নতুন করে ইজারা দেওয়া হয়নি। গত বর্ষা মৌসুম পুরোটা ইজারাবিহীন অবস্থায় থাকায় পাহাড়ি ঢলের সুবাদে জমা হওয়া পাথরগুলো লুটপাটের চেষ্টা চলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি পানি কমে যাওয়ায় পাথর কোয়ারি চিহ্নিত স্থান ছাড়াও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে বড় বড় পুকুরের মতো গর্ত করে পাথর উত্তোলনে নিষিদ্ধ যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। জমির মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনকারী একটি চক্র এ কাজে সক্রিয় হয়। খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আকস্মিক অভিযান চালায়।

বিছনাকান্দিতে এবারের পাহাড়ি ঢলে নতুন করে পাথরের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। যন্ত্র দিয়ে ওই স্তূপ খোঁড়াখুঁড়ি করে চলছে পাথর উত্তোলন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পানির পাম্প দিয়ে তৈরি একধরনের পাথর উত্তোলন যন্ত্র ‘বোমা মেশিন’। ২০০৯ সাল থেকে সিলেটের পাথর কোয়ারিতে এ যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়। মাটির প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বোমা মেশিনসহ যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরাসরি পরিবেশ অধিদপ্তরকে টাস্কফোর্সের অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়।

ধ্বংস করা একেকটি যন্ত্রের মূল্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এই হিসেবে ৫০টি যন্ত্রের দাম প্রায় এক কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন। অভিযান শেষে সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দেখামতে এ রকম ধ্বংসযজ্ঞ কোনো পাথর কোয়ারিতে দেখা যায়নি। সমতল ভূমিতে বিশাল গর্ত করে মাটির অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট গভীর থেকে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছিল। এসব পাথর দীর্ঘ পাইপ বসিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছিল। বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি দীর্ঘদিন ইজারাবিহীন অবস্থায় থাকায় সেখানে লুটতরাজ চলছে।’