Thank you for trying Sticky AMP!!

উদ্বোধনের পরপরই কোটি টাকার পানির পাম্প ধসের উপক্রম

ঝিনাইদহ জেলার মানচিত্র

প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানির একটি পাম্প উদ্বোধনের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পাম্প ভবনের মেঝের একটি পাশ ধসে গিয়ে নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করায় পাম্পটি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভা এলাকার নওদাগায়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, গত রোববার দুপুরে পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামান সেলিম পাম্পটির পানি সরবরাহ কাজের উদ্বোধন করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করে এলাকার মানুষের পানির প্রয়োজনে পাম্পটি চালু করার ব্যবস্থা করেন। এ সময় পৌর মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রকিব উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটচাঁদপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড নওদাগা ও কাশিপুরের অংশবিশেষের মানুষের পানির প্রয়োজনে গভীর নলকূপটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করেছে। ওই দপ্তরের কোটচাঁদপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান জানান, পাম্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের শেষ দিকে। তিনি পরে এই উপজেলায় যোগদান করেছেন। তিনি যত দূর জানেন, দুজন ঠিকাদার কাজটি করেছেন। পানির লাইনের কাজের জন্য প্রায় ৬০ লাখ, আর ভবনের জন্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কাজটি দুজন ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। নানা জটিলতায় কাজে দেরি হয়। তারপরও সব কাজ সম্পন্ন করে সদ্য চালু করা হয় পাম্পটি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রকিব উদ্দিন জানান, পাম্পটি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বসানো হয়েছে। এই পাম্পের মাধ্যমে নওদাগা, কাশিপুর ও শহরের কিছু অংশের গ্রাহকেরা পানি পাবেন। পাম্পটিতে যে মোটর বসানো হয়েছে, তা দিয়ে এক মিনিটে ১৩ লিটার পানি উত্তোলন করা যাবে। এই পাম্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া যাবে। বর্তমানে তাঁর এলাকায় মাত্র ১৫০ জন গ্রাহক রয়েছেন। তিনি জানান, পাম্পটি উদ্বোধনের পরপরই ভবনে ফাটল ও মেঝে ধসে পড়ায় এটি আদৌ মানুষের উপকারে আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ভবনের চারপাশে ইট বিছিয়ে তার ওপর প্লাস্টার করা হয়েছে। নিচে দেওয়া হয়েছে বালু। বালু সরে যাওয়ায় এই ধস দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভবনটিও ফাটলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

নওদাগা গ্রামের মাহাতাব আলী জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই পাম্প তৈরি করা হয়েছে। এরপর গত রোববার দুপুরে চালু করার পরদিনই দেখা যায়, পাম্প ভবনের নিচের অংশ থেকে মাটি ধসে গেছে। সেখানে সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। পাম্পের চালক কোটচাঁদপুর পৌরসভার কর্মচারী সাইদুল রহমান জানান, রোববার মেয়রসহ অন্যরা এসে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে যান। তিনি পরদিন সকালে এসে দেখেন, মাটি ধসে যেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ভবনের সামনের অংশের অনেকটা ধসে গেছে। ভবনটিতেও ফাটল ধরে গেছে। তবে পানির লাইন এখনো ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে মাটি ধসে যেতে থাকলে পানির লাইনেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর যেভাবে ভবনটিতে ফাটল ধরেছে, তাতে ওই ভবনে প্রবেশ করতে এখনই ভয় লাগছে।

পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, কাজটি দেখভাল করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। তাঁরা মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিয়েছেন। এখন এই পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বিভাগকে দ্রুত দেখার জন্য জানিয়েছেন। পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামান সেলিম জানিয়েছেন, ঠিকাদারেরা এই কাজের বিল নিয়ে গেছেন। তারপরও তাঁরা মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলেছেন। আশা করছেন, দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। আর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের স্থানীয় উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান জানান, তাঁরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ঠিকাদার মেরামত করে দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে লকডাউনের কারণে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে জানান।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।