Thank you for trying Sticky AMP!!

উদ্যমী সাবিহার শখের খামার

নিজের খামারে গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত খামারি সাবিহা বেগম। ছবি: প্রথম আলো

নারী বলে ঘরে বসে থাকবেন, তা হবে না। যখন স্কুলে যান, বুঝতে শেখেন তখন থেকেই সাবিহা বেগমের এই ইচ্ছে। পড়াশোনা তো করবেনই, পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করতে হবে। ভেতরের এই তাগিদ ও প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে সফলতা এনে দিয়েছে। টার্কি পালন দিয়ে শুরু সাবিহার। এখন জেলায় দেশি গরুর সবচেয়ে বড় খামারের মালিক তিনি।

সাবিহার বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের নতুনপাড়া এলাকায়। সুনামগঞ্জে সাবিহা বেগমই প্রথম টার্কির খামার করেন। এরপর আনেন গাড়ল (ভেড়া)। গরু শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে এখন গরুতেই জোর দিচ্ছেন বেশি। এখন তাঁর খামারে ১৫০টি দেশি গরু রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতেই এসব গরু মোটাতাজা করা হয়। খামারের কর্মীদের সঙ্গে নিজেও সবকিছু দেখাশোনা করেন। 

শুধু খামারই নয়, উদ্যমী এই নারী একসময় বালু-পাথরের ব্যবসাও করেছেন। আর এসবের পেছনে প্রেরণা হিসেবে আছেন ফ্রান্সপ্রবাসী স্বামী ফাইজুল জাহান। এইচএসসি পাস করার পর ২০০২ সালে সাবিহার বিয়ে হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে হেমায়েত জাহান অষ্টম এবং ইফসাত জাহান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও খামার সামলানোর পাশাপাশি সামাজিক আরও বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছেন সাবিহা। তাঁর দেখাদেখি এখন এলাকার অন্য নারী-পুরুষেরাও ভেড়া ও গরু পালন করছেন। হাঁস-মুরগির খামার করছেন। 

৩৭ বছর বয়সী সাবিহার বাবা দুবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। বিয়েও হয়েছে সচ্ছল পরিবারেই। চেয়ারম্যানের মেয়ে ছাগল-মুরগি পালেন, গরুর খামার করেন, এসব নিয়ে প্রথমে অনেকেই অনেক কথা বলেছে। কিন্তু এখন সবাই প্রশংসা করেন।

সাবিহা বেগম জানান, তাঁর খামারের নাম দিয়েছেন নোভা বহুমুখী ফার্ম। নোভা তাঁর মেয়ের ডাকনাম। খামারের পাশেই তাঁদের বাড়ি। খামারে প্রায় ২ একর জমি আছে। খামারে তিনটি টিনের ছাউনির নিচে গরুগুলো রাখেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শেডগুলোর একটিতে বড়, একটিতে মাঝারি এবং অন্যটিতে ছোট আকৃতির গরু রয়েছে। সব দেশি জাতের গরু। ঘাস, খড় ও ভুসি খাওয়ানো হয়। এর বাইরে অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো হয় না। 

আশপাশের এলাকা থেকে মাঝারি আকৃতির গরু কিনে আনেন সাবিহা। এগুলোর দাম পড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার। কোনোটি এক বছর আবার কোনোটি দুই বছর খামারে থাকে। এরপর বিক্রি করা হয়। তখন দাম হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।  খামারে সার্বক্ষণিক চারজন কর্মী রয়েছেন।

সাবিহা বেগম জানান, বিয়ের পর স্বামীকে কিছু একটা করার কথা জানান। স্বামীও খুশি হন। শুরু করেন বালু-পাথরের ব্যবসা। ২০১৫ সালে মনোযোগী হন খামারে। শুরুতে ১৫টি গরু ছিল। এরপর ৩০০ টার্কি নিয়ে আসেন। এরপর তিনি ২০০ গাড়ল আনেন। এখন খামারে শুধু গরু আছে।

সাবিহা বেগমের সঙ্গে তাঁর দেবর মোহাম্মদ ওবায়দুল সার্বক্ষণিক খামারটির দেখাশোনায় আছেন। ওবায়দুল বলেন, ‘আমার ভাবি খুবই পরিশ্রমী। যা বলেন, সেটা তিনি করেই ছাড়েন।’

সাবিহা বেগম খামার থেকে কোনো লাভ এখন অন্য কোথাও নিচ্ছেন না। লাভ যা হচ্ছে আবার খামারেই বিনিয়োগ করছেন। তাঁর ইচ্ছে খামারটি অনেক বড় করার। উপজেলার প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা  এতে উৎসাহ ও পরামর্শ দেন।

জামালগঞ্জ উপজেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা বেগম বলেন, সাবিহার সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি সব সময়ই উদ্যোগী, উদ্যমী। এটা অনেক পুরুষের মধ্যেও দেখা যায় না। সাবিহা যেকোনো কাজে হাল ছাড়েন না। লেগে থাকার মানসিকতাই তাঁকে সফলতা এনে দিয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, সুনামগঞ্জে ডেইরি ফার্ম আছে ২৯৫টি। দেশি গরুর খামার কম। তবে যে কয়টা আছে, তার মধ্যে সাবিহা বেগমের খামারই বড়। তাঁর দেখাদেখি এখন এলাকার অনেকেই গরু ও হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন।