Thank you for trying Sticky AMP!!

একটা সাইকেল কেনার স্বপ্ন পূরণের জন্য ইটভাটায় কাজ করছে ঠাকুরগাঁওয়ের কিশোর মারুফ

একটা সাইকেলের স্বপ্ন পূরণ করতে...

সহপাঠীরা যখন বাহারি সব বাইসাইকেলে করে স্কুলে যায়, তখন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিন বঠিণা গ্রামের মারুফের মন উদাস হয়ে যায়। এমন একটি সাইকেলের সাধ জাগে তার। কিন্তু বাবার পক্ষে তার সেই সাধ পূরণ করার সাধ্য নেই। বাবার কাছে সাইকেল কেনার বায়না না করে নিজেই সাইকেলের টাকা জোগাড়ে নেমে গেল। এখন সে ইটভাটায় কাজ করছে।

সম্প্রতি সদর উপজেলার দক্ষিণ বঠিণা গ্রামের এআরএ ব্রিকস নামের ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, রোদে শুকানোর জন্য ইটভাটায় থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। তার মধ্যে সাঁচে মাটি ফেলে একমনে ইট তৈরিতে ব্যস্ত কিশোর মারুফ। কথায় কথায় নিজের সাধের কথা জানাল সে। মারুফ বলল, তার পুরো নাম মারুফ হোসেন। সে পুরোনো ঠাকুরগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা এলাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। পরিবারে তার আরও দুই ভাই আছে। তারাও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাতে তার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। ফলে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা আর বাবাকে বলেনি সে।

মারুফ বলে, করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ। বাড়িতে প্রায় অলস সময় পার করছিল সে। এই সুযোগে নিজের আয়ে বাইসাইকেল কেনার কথাটি মাথায় আসে তার। সারা দিন কাজ করে তার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। পুরোটাই সে জমিয়ে রাখছে। এখানে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই কিশোর বলে, শুরুর দিকে ঠিকমতো ইট কাটতে পারত না সে। অন্য শ্রমিকের কাছ থেকে শিখে নিয়েছে। এখন সে ইট তৈরিতে অনেকটাই দক্ষ। সাইকেল কেনার মতো টাকা হয়ে গেলে সে এই কাজ ছেড়ে দেবে বলে জানাল। এরপর সাইকেলে প্যাডেল মেরে ভোঁ-ভোঁ করে ঘুরে বেড়াবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১৯টি ইটভাটা আছে। এসব ভাটায় শিশু-কিশোরেরা কাঁচা ইট তৈরি, ইট রোদে শুকানো, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজই করে।

জেলা ইটভাটা সমিতির সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, ইটভাটার মালিকেরা শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয় না। অনেকে নিজের ইচ্ছায় কাজ করে। আবার অনেক শ্রমিক পরিবার নিয়ে ইটভাটায় থাকেন। তাঁদের ছেলে-মেয়েরা খেলাচ্ছলে টুকটাক কাজ করতে পারে। তবে এর সঙ্গে ইটভাটার কোনো যোগ নেই।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শিশুরা পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।