Thank you for trying Sticky AMP!!

একটি ভেঙে পড়ে আছে, দুটির দুপাশে মাটি নেই

কুড়িগ্রাম সদরের হেমেরকুটি গ্রামের পশ্চিম প্রান্তের এ সেতু ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়। এটির দুই পাশে মাটি ভরাট হয়নি। প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগের করা তিনটি সেতুর একটি নির্মাণের তিন মাসেই ভেঙে পড়েছে। অপর দুটির দুই পাশে নির্মাণের দুই বছরেও মাটি ভরাট করা হয়নি। সেতু তিনটির ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করতে পারছেন না।

দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওই তিনটি সেতু ১ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের হেমেরকুটি গ্রামে ৩৯ লাখ করে টাকা ব্যয়ে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। আর গত জুনে ফুলবাড়ী উপজেলার পূর্ব ধনিরাম গ্রামে ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

এলাকার লোকজন জানান, ২০১৭ সালে সদর উপজেলার হেমেরকুটি গ্রামে এক কিলোমিটার এলাকার ভেতর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এখনো এ সেতু দুটির দুপাশে মাটি ভরাট করা হয়নি।

কুড়িগ্রাম সদরের হেমেরকুটি গ্রামের পূর্ব প্রান্তের এ সেতু ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়। এটির দুই পাশে মাটি ভরাট হয়নি। ছবি: প্রথম আলো

হেমেরকুটি এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের ও রহমত আলী মিয়া বলেন, গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করছে। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে এ উন্নয়ন মানুষের কাজে আসছে না। এ সেতু দুটি দিয়ে শুকনা মৌসুমেও চলাচল করা যায় না। বন্যা মৌসুমে ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে।

আবু বক্কর ও মজিবর রহমান বলেন, সেতুর কারণে আবাদি জমিতে বালু পড়ছে। বর্ষায় ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো স্কুল যেতে পারে না। তখন খুব সমস্যা হয়। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

জানতে চাইলে সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) খন্দকার মো. ফিজানুর রহমান বলেন, সেতু দুটির দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়েছিল। বন্যায় সেগুলো ধুয়ে নিয়ে গেছে।

কিন্তু এলাকার ফজল আলী, হাজেরা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, সেতু দুটির দুই পাশে কখনো মাটি দেওয়া হয়নি। সেতু দুটির ওপর দিয়ে তাঁরা এক দিনও হাঁটতে পারেননি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় সেতুটি নির্মাণ শেষে জুনে খুলে দেওয়া হয়। চলতি আগস্টেই এটি ধসে পড়ে। সম্প্রতি পূর্ব ধনিরাম গ্রামে। প্রথম আলো

দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত জুনের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব ধনিরাম গ্রামের সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১১ আগস্ট সেতুটির একাংশ ধসে পড়ে। ধসে পড়া অংশের দুই দিকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে বর্তমানে লোকজন চলাচল করছেন। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সেতুটি ধসে পড়েছে।

ফুলবাড়ীর ধনিরাম গ্রামের মকবুল হোসেন, সোহরাব মিয়া ও ছক্কু মিয়া বলেন, এ এলাকায় এবার বন্যা হয়নি। এরপরও সেতু ভেঙে পড়ল। উপায় না পেয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেতু নির্মাণের সময় ঠিকমতো রড, সিমেন্ট দেওয়া হয়নি। এতে তাঁরা বাধা দিলেও আমলে নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, কাজে দুর্নীতি হয়নি। বন্যায় সেতুটির নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে। নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।

কিন্তু পিআইওর এ বক্তব্যের সত্যতা মেলেনি। বন্যা ও বন্যা–পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় এ সেতুর নাম নেই।

এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খায়রুল আনাম বলেন, ত্রাণ শাখার মাধ্যমে যেসব ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়, সেগুলো উপজেলা থেকে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। তবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।