Thank you for trying Sticky AMP!!

এক গ্রামেই বিধ্বস্ত চারসেতু

একটি সেতুর সংযোগ সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি সাঘাটার পশ্চিম বাটি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় গাইবান্ধার সাঘাটা-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে চারটি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এসব জায়গায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লোকজন যাতায়াত করছে। তবে দেড় মাস ধরে ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে।

ওই চারটি সেতু সাঘাটার বাটি গ্রামের বাটি, পূর্ব বাটি, মধ্য বাটি ও পশ্চিম বাটি এলাকায় অবস্থিত। এসব সেতুর ভেঙে যাওয়া সংযোগ সড়ক মেরামত না করার কারণে সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৯টি গ্রামের তিন লাখের বেশি মানুষের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

বাটি গ্রামের ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান বলেন, সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে তাঁদের ব্যবসার মালামাল আনতে হয়। কিন্তু যাতায়াতব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহর থেকে মালামাল আনতে পারছেন না। এ কারণে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত গাইবান্ধায় বন্যা হয়। এ সময় পানির চাপে সাঘাটার ২৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ভেঙে গেছে। অন্তত ১০টি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। এর মধ্যে সাঘাটা-গোবিন্দগঞ্জ সড়কেই চারটি সেতু রয়েছে। এ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। এটি সাঘাটার বোনারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব বাটি গ্রাম থেকে শুরু হয়ে গোবিন্দগঞ্জের রাখালবুরুজ ও নাকাই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ শহর পর্যন্ত চলে গেছে। পূর্ব বাটি গ্রাম থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ওই চারটি সেতু পড়েছে। এসব সেতুর ভেঙে যাওয়া সংযোগ সড়কের স্থানে চারটি সাঁকো বসানো হয়েছে।

ঝুঁকি নিয়ে চলছে মোটরসাইকেলসহ অন্য যানবাহন। সম্প্রতি সাঘাটার বাটি গ্রামে। প্রথম আলো

এলাকার কয়েকজন বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে বসানো সাঁকোগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে এগুলোর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে এর ওপর দিয়েই লোকজন পারাপার হচ্ছে।

দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বোনারপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শিখা আক্তার বলে, প্রতিদিন দলদলিয়া থেকে ভ্যানে করে স্কুলে যেতে পাঁচ টাকা খরচ হতো। কিন্তু রাস্তা নষ্ট হওয়ায় পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু সড়কগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না।

ওই সড়ক দিয়ে সাঘাটার ১১টি ও গোবিন্দগঞ্জের আটটি গ্রামের লোকজনকে যাতায়াত করতে হয়। সাঘাটার গ্রামগুলো হলো বাটি, পশ্চিম রাঘরপুর, ভূতমারা, ফুটানির বাজার, রামনগর, দলদলিয়া, ময়মন্তপুর, মানিকগঞ্জ, বুরুঙ্গী, কানিপাড়া ও গাছাবাড়ী। গোবিন্দগঞ্জের গ্রামগুলো হচ্ছে রাখালবুরুজ, তেঁতুলতলি, সোনাইডাঙ্গা, তালুক সোনাইডাঙ্গা, চর সোনাইডাঙ্গা, নাকাই, মধুরাপুর ও নারায়ণপুর।

একটু অসতর্ক হলেই পড়বে খাদে। সাঘাটা-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের মধ্য বাটি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ময়মন্তপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘আমার গ্রাম থেকে সাঘাটা উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। এর চারটি স্থানে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মালামাল আনতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার হলেও সড়কগুলো মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকোগুলোর কোনোটির কাঠের পাটাতন খুলে গেছে, কোনোটির খুঁটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে সাঁকো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এর ওপর দিয়েই লোকজন পারাপার হচ্ছে। রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল উঠলে সাঁকো দোল খাচ্ছে।

রাখালবুরুজ গ্রামের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে সাঘাটার যোগাযোগ ভালো। সাঘাটা থেকে মালামাল এনে ব্যবসা করতাম। কিন্তু এ সড়কে পাশাপাশি চারটি সাঁকো। ফলে দেড় মাস ধরে মালামাল পরিবহন বন্ধ রয়েছে।’

বাঁশের সাঁকো দিয়ে হেঁটে পার করা হচ্ছে সাইকেল। সাঘাটার পূর্ব বাটি এলাকায়। প্রথম আলো

জানতে চাইলে বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল ওয়ারেছ প্রধান বলেন, সড়কটি দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। প্রয়োজনে এক উপজেলার মানুষ আরেক উপজেলায় যায়। অথচ সড়কটি মেরামতের জন্য এখনো বরাদ্দ আসেনি। এটি সংস্কারের জন্য এলজিইডিকে জানানো হয়েছে। বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে মেরামত করা হবে।