Thank you for trying Sticky AMP!!

এক লাখ টাকার জন্য আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক

পঞ্চগড় জেলার মানচিত্র

নিজের পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা আদায় করতে আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের নাটক সাজিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছেন হাবিবুর রহমান (২৯) নামের পঞ্চগড়ের এক যুবক। তাঁকে খুঁজে বের করার পর পুলিশের কাছে নিজ থেকেই আত্মগোপনে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

গতকাল সোমবার রাতে হাবিবুরকে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এর আগে গত রোববার মধ্যরাতে টাঙ্গাইল জেলা শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে তাঁর খোঁজ পান পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশের সদস্যরা।

হাবিবুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার পূর্ব জালাসি এলাকার বাসিন্দা। তিনি পোলট্রি মুরগির খামার ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় গতকাল রাতেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ব্যক্তিগত ধারদেনা পরিশোধের কোনো উপায় না পেয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন হাবিবুর।

পুলিশ ও হাবিবুরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১২ এপ্রিল দুপুরের পর বাড়ি থেকে বের হন হাবিবুর। এরপর থেকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কোনো সন্ধান পাননি। ১৬ এপ্রিল হাবিবুরের স্ত্রী আছিয়া বেগমের মুঠোফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে অপহরণের কথা জানানো হয়। মুক্তি পেতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।

১৮ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় হাবিবুরের বাবা ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। হাবিবুরের স্ত্রী আছিয়াকে মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশ। ২২ এপ্রিল আবার কল পাওয়ার পর মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হন আছিয়া। ২৩ এপ্রিল দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে টাকা নিয়ে যেতে বলা হয় তাঁকে। ওই দিন সেখানে যান আছিয়া। বিষয়টি দূর থেকে সাদাপোশাকে নজরদারি করে পুলিশ। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও কেউ টাকা নিতে আসেননি।

আছিয়া সেখান থেকে ফিরে এলে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল করে হাবিবুর বলেন, ‘তুমি পুলিশের সাহায্য নিয়েছ কেন? অপহরণকারীদের লোক সেখানে গিয়ে তোমার সঙ্গে পুলিশ দেখেছে।’ এ সময় অপহরণকারীদের কাছে তিনি অনেক কষ্টে আছেন বলেও দাবি করেন।

এরপর আছিয়ার অনুরোধে তাঁর কাছে কল আসা মুঠোফোন নম্বরটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালায় পুলিশ। ২৪ এপ্রিল পুলিশ হাবিবুরের অবস্থান টাঙ্গাইল সদর থানার আদালতপাড়া এলাকায় বলে নিশ্চিত হয়। ২৫ এপ্রিল সদর থানা-পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইল পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে টাঙ্গাইল জেলা শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে হাবিবুরকে খুঁজে পান পুলিশের সদস্যরা।

হাবিবুর ওই আবাসিক হোটেলের কক্ষটি ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলেন বলে জানতে পারে পুলিশ। পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই)) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, যে মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, তা হাবিবুরের নামেই কেনা। এ ছাড়া ওই নম্বর হাবিবুরের মুঠোফোন সেটেই ব্যবহার করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আককাছ আহমদ বলেন, পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিতেই হাবিবুর নিজে আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজান। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি (হাবিবুর) এ কথা স্বীকার করেছেন।

হাবিবুরের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর ব্যক্তিগত কিছু ধারদেনা আছে। এ জন্য তিনি হয়তো এমনটা করেছেন। পুলিশের সহায়তায় তাঁকে (হাবিবুর) ফিরে পেয়ে পরিবার খুশি। তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই।