Thank you for trying Sticky AMP!!

এডিসের প্রজনন রোধে বাস্তবে কার্যক্রম নেই

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চত্বর, বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ডাস্টবিনে, এমনকি নগর ভবনের সানশেডেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

ডেঙ্গু মশা

রাজশাহী নগরে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও এডিস মশার প্রজনন রোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি।

যদিও নগরের বিভিন্ন জায়গা এখন এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চত্বর, বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ডাস্টবিনে, এমনকি নগর ভবনের সানশেডেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। নগরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আগেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন নগরের বাসিন্দারা।

রাজশাহীতে এখনো কারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে তিন ডেঙ্গু রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, তিন রোগীর মধ্যে একজনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় রোগী এখনো ভর্তি হয়নি। রোগী বাড়লে ২৫ নম্বর করোনা ওয়ার্ডটি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

গত সোমবার দুপুরে নগর ভবনের সরিৎ দত্ত গুপ্ত সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় করোনার পাশাপাশি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগ বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি বার্তা পৌঁছে দেওয়া; এডিস মশার প্রজনন রোধে টব, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণ করা; নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে জমে থাকা পানি অতি দ্রুততম সময়ে অপসারণের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র চোখে পড়েছে। নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় কারাস্কুলের সামনের রাস্তার পাশ থেকে বৃষ্টির পানি কখনোই নিষ্কাশিত হয় না। এখন সেই পানিতে মশা ভনভন করছে। পানির ওপরে রীতিমতো মশার একটি আস্তরণ তৈরি হয়েছে। শাহ মখদুম পাঠাগারের পাশের ডাস্টবিনে পানি জমে একইভাবে মশার জন্ম নিয়েছে। টিকাপাড়া এলাকার রাস্তার ধারে জমে থাকা পানি দিব্যি মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে আছে। শাহ মখদুমের মাজারের সামনে রাস্তার ধারে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা ও পরিণত মশা সবই দেখা যায়। নগরের ফুদকিপাড়া এলাকায় মুন্নুজান স্কুলের সামনে রাস্তার ধারের গর্তে একইভাবে মশার বিস্তার দেখা যায়। পদ্মা মন্দিরের সামনেই বটতলায় জমে থাকা পানিতেও মশার প্রজনন হচ্ছে।

রাজশাহী নগর ভবনের গ্রিনপ্লাজার সানশেডেও যেভাবে পানি জমে আছে, তাতেও এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। এই পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকতেই দেখা যায়, রাস্তার পাশে জমা পানিতে মশার জন্ম হয়েছে। সেখানে অনায়াশেই মশার লার্ভা জন্মাতে পারে।

এ ছাড়া নগরের শালবাগান এলাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের রাস্তায়, বিসিক এলাকাজুড়ে রাস্তার ধারে বিভিন্ন জায়গায় এডিস মশার প্রজনন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

২০১৯ সালের ৬ আগস্ট রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয় থেকে পরিচালিত কীটতত্ত্বীয় একটি জরিপের ফলাফল থেকে নগরে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কথা জানা গিয়েছিল। তারা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন ও ছাত্রীনিবাসের সামনেই এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পান। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পাত্রে, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ারে এবং রাস্তার ধারে পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এবার এ ধরনের কোনো জরিপ চালানো হয়নি।

সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা নিয়মিত নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে। অনলাইনেও সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন।

নগর ভবনের শেডে জমে থাকা পানির ব্যাপারে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার বেশি যাতে জমে না থাকে, সেই বিষয়ে তাঁরা নজর রাখেন। এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। ওই পানি বেশি সময় জমে থাকার সুযোগ পাচ্ছে না। অন্যান্য জায়গায় জমে থাকা পানিতে মশা ভনভন করছে শুনে তিনি বলেন, ওই জায়গাগুলোতে মশা ছাড়াও অন্যান্য কীটপতঙ্গও আছে। সেগুলো তাঁরা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করবেন।