Thank you for trying Sticky AMP!!

মার্জিয়া কান্তা খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে নেওয়া হয় নরসিংদী পিবিআই কার্যালয়ে। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের পরে।

এতদিনে জানা গেল খুন হয়েছেন মার্জিয়া, লাশটাও মিলবে না

ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করেন। এরপর নিয়ে গেছেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। সেখানে হোটেল কক্ষে খুন করে পালিয়ে যান স্বামী। নিখোঁজ মেয়েকে একদিন ফিরে পাবেন, এমন আশায় ছিলেন বাবার বাড়ির লোকজন। ঘটনার দুই বছর পরে এসে জানছেন, মেয়ে আর নেই। লাশটাও পাওয়া যাবে না।
এ ঘটনা নরসিংদীর বেলাব উপজেলার। নিহত নারীর নাম মার্জিয়া কান্তা (২৫)। তিনি উপজেলার বীরভাগবেড় গ্রামের সেহারাব হোসেনের মেয়ে। ঘটনাটি তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শনিবার সংস্থাটির নরসিংদী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

মার্জিয়া কান্তা

পিবিআই গত কয়েক দিনে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মো. মামুন মিয়া (২৬), পটুয়াখালীর কুয়াকাটার হোটেল আল মদিনার দুই মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৪) ও তাঁর ভাই আনোয়ার হোসেন (৩৭) এবং ওই হোটেলের ব্যবস্থাপক আমির হোসেন (৩৮)। আর নিহত মার্জিয়ার স্বামী শহিদুল ইসলাম ওরফে সাগর (৩৭) গত বছরের নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, নিহত মার্জিয়া কান্তার ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ‘কান্তা বিউটি পার্লার’ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানেই পরিচয় হয় কুড়িগ্রামের রৌমারীর বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের। একপর্যায়ে দুজন বিয়ে করেন। আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া করে সংসার পাতেন। কিন্তু বিয়ের পর শহীদুলের একাধিক স্ত্রী থাকার কথা জানতে পারেন মার্জিয়া। এ নিয়ে কলহের সৃষ্টি হয়। এর জেরেই এই হত্যাকাণ্ড।

পিবিআই বলছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে বেলাব উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন মার্জিয়া। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে ভারত ভ্রমণের কথা বলে বের হন স্বামী শহিদুল ইসলাম। স্ত্রীকে প্রথমে নিয়ে যান আশুলিয়ার বাসায়। সেখান থেকে যান শরীয়তপুরে। সেখানে নদী ভাঙন দেখানোর কথা বলে নিয়ে গিয়ে মার্জিয়াকে সহযোগী মামুনের সহযোগিতায় হত্যার চেষ্টা করেন শহিদুল। তবে সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এরপর মার্জিয়াকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নিয়ে যান সমুদ্র সৈকত দেখানোর নাম করে। সেখানকার আল মদিনা নামের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তাঁরা। হোটেল কক্ষে মার্জিয়াকে গলাটিপে হত্যা করেন শহিদুল ও মামুন। এরপর খাটের তলায় লাশ ঢুকিয়ে রেখে পালিয়ে যান। হোটেল কর্তৃপক্ষ যখন লাশ পায়, তখন তারা পুলিশি ঝামেলায় পড়তে চায়নি। তারা লাশটি সাগরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে হোটেল কক্ষ থেকে মার্জিয়ার লাশ না পেলেও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের লাগেজ, কাপড়, একটি চাপাতিসহ কিছু আলামত উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, মার্জিয়ার লাশ উদ্ধার করতে না পারলেও তাঁর ব্যবহৃত লাগেজ, কাপড়, জুতাসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেয়। এর ভিত্তিতে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস মার্জিয়ার কোনো খোঁজ না পেয়ে বাবা সেহারাব হোসেন রৌমারীতে শহিদুলের বাড়িতে যান। শহিদুল তখন বলে দেন, মার্জিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া নানাভাবে তিনি সেহরাবকে নাজেহাল করেন। এরপর সেহরাব গত বছরের ২০ জানুয়ারি নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় মার্জিয়ার স্বামী শহিদুল গত বছরের নভেম্বরে নরসিংদীতে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
পিবিআই বলছে, শহিদুলের সহযোগী মামুনকে গত মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রৌমারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই ঘটনার জট খুলতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে মামুন সবকিছু স্বীকার করেন। এরপর কুয়াকাটা থেকে বুধবার হোটেল মালিক দেলোয়ার ও আনোয়ার এবং ব্যবস্থাপক আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরো রহস্য উদ্ধারের পরই শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে পিবিআই।
নরসিংদী পিবাইআইয়ের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামিকে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়। তাঁরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।