Thank you for trying Sticky AMP!!

‘এবার স্বামী কথা শুনমো না, যোগ্য প্রার্থীক ভোটটা দিমো’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিউর রহমান গণসংযোগে ব্যস্ত। মাটিয়ালপাড়া গ্রাম, ইকরচালী ইউনিয়ন, তারাগঞ্জ, রংপুর, ২০ নভেম্বর

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে চারপাশে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারের দরজায় কড়া নাড়ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের মন পেতে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।

তবে নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, সেই হিসাব ইতিমধ্যে কষে নিয়েছেন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের গৃহিণী ভোটারদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, প্রতীক ও কারও কথায় নয়, দেখেশুনে, বুঝে, সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে নিজের ভোট দেবেন।

তারাগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় দফায় ২৮ নভেম্বর এখানে ভোট হবে। এবারও দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এ উপজেলায় ৫৫ হাজার ৮৫২ জন পুরুষ ও ৫৫ হাজার ১৫৬ জন নারী ভোটার আছেন। পাঁচটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩০ জন, সংরক্ষিত আসনে সদস্যপদে (নারী) ৭১ জন এবং সাধারণ আসনের (পুরুষ) সদস্যপদে ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থীদের সম্পর্কে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের কথা জানতে এ প্রতিবেদক তারাগঞ্জে বিভিন্ন গ্রামের নানা শ্রেণি-পেশার বেশ কিছু গৃহিণীর সঙ্গে কথা বলেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় কথা হয়, দোলাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রহিমা বেগমের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট আলচে। চেয়ারম্যান-মেম্বার বাড়িত আসি পুরুষ মানুষেরটে ভোট চাওছে। কিন্তু হামারও যে ভোট আছে, সেটা ভুলি গেইছে। এবার স্বামী কথা শুনমো না। খোঁজখবর নিয়া সৎ, যোগ্য প্রার্থীক ভোটটা দিমো।’

কথা হয়, সয়ার ইউনিয়নের কাংলাচড়া গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমী বেগমের (২৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোটের বেশি দিন নাই। প্রার্থীরা হাট-বাজার–গ্রামে দৌড়াদৌড়ি শুরু করছেন ভোটের জন্য। স্বামী, শ্বশুরদের চা-পান খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু হামরা ওই চান-পান খায়া কাকও ভোট দিমো না। যায় নারীর দুঃখ, দুর্দশা বুঝবে, তার মার্কাত সিল মারমো।’

বাড়ির উঠানে রান্না বসিয়েছেন ইকরচালী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শাহাজাদি বেগম (৫০)। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা দলে দলে আসি হামার সোয়ামির কাচত, গ্রামের দেওয়ানির কাচত বসি ভোট চাওছে। হাত মুছাফা করি পান–বিড়ি খাওয়াওছে। কওছে ভোটের দিন তোমার বাড়ির সোবায়কে আমার মার্কাত নিগি ভোট দেওয়ান। কিন্তু এবার তো হামার দেওয়ানির কথা শোনমো না, সোয়ামির কথাতও ভোট দিমো না। নিজের ইচ্ছা মনের মতো প্রার্থীক ভোটটা দিমো।’

ফকিরপাড়ার মোড়ে বসে গল্প করছেন ইকরচালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ও চাকরিজীবী মকছুদা আক্তার (৩০)। ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা দলে দলে ভোট চাইতে বাসায় আসেন। তাঁরা এসেই বাড়ির অভিভাবককে খোঁজেন। গতকাল শুক্রবার এক প্রার্থী বাসায় ভোট চাইতে এসে আমাকেই বলছেন, এই বাসার অভিভাবক কে! আমিও একজন ভোটার। কিন্তু তিনি আমার কাছে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না।’

ইকরচালী বাজারে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রামাণিকপাড়া গ্রামের সোলেমা বেগম (৪৫)। ভোট নিয়ে কী ভাবছেন বলতেই তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর পরেও কায়ও খোঁজ নেয় নাই। এখন ভোট আলছে, বাড়িত আসি হামার ভোট নিবার জন্য বাড়ির পুরুষগুলাক প্রার্থীরা অনুরোধ করোছে। পুরুষরাই কি একলায় ভোটার, হামার ভোটের কি দাম নাই। এবার বুঝিশুনি ভোট দেমো।’

ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন ফকিরপাড়া গ্রামের ওপিয়া বেগম (৪২)। তিনি বলেন, ‘যায় হামার মহিলার ঘরোক দাম দিবে, গরিব দুঃখির কষ্ট বুঝবে। তাকে হামরা নেতা বানামো।’

ইকরচালী ডিগ্রি কলেজ মাঠে কথা হয় জগদীশপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার নতুন ভোটার হইছি। জীবনের প্রথম ভোট নষ্ট করতে চাই না। যাকে যোগ্য, দক্ষ, সৎ মনে হবে তাকেই ভোট দেব।’
কারও কথায় নয়, এমনকি স্বামীর কথায়ও এবার ভোট দেবেন না হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রামের লাকী বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দিব।’

ভোটাদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা
উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী ক্যাম্প। এসব নির্বাচনী ক্যাম্পে কর্মী-সমর্থকদের জটলা। কেউ কেউ বিলি করছেন প্রচারপত্র। গ্রামে মাইকিংও চলেছে নানা গানে।

বুড়িরহাট দোলাপাড়া গ্রামে সয়ার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোফেকুর রহমান তাঁর নৌকা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ভোটারদের বলছেন, ‘আপনাদের মূল্যবান ভোট যাকে তাকে দিয়ে নষ্ট করবেন না। নৌকা মার্কা ভোট দিন। আমাকে নির্বাচিত করুন। চেয়ারম্যান হলে এলাকার চিত্র বদলে দিব। রাস্তা-ঘাট, সেতু–কালর্ভাট সব আদায় করব এমপি মহোদয়ের কাছে।’

ইকরচালী ইউনিয়নের মেনানগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইকরচালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিউর রহমানও প্রচারণায় ব্যস্ত। তিনি তাঁর প্রচারপত্র দেখিয়ে নৌকা মার্কা ভোট চেয়ে ভোটারদের বলছেন, ‘গত পাঁচ বছর এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি। কারণ, সরকারি দলের কোনো চেয়ারম্যান ছিল না। আমাকে নির্বাচিত করুন। সরকার ও আপনাদের সহযোগিতায় ইকরচালী ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করব।’