Thank you for trying Sticky AMP!!

ওরা এখন বড় হবে অন্য মায়ের ঘরে

জন্মের পর মায়ের বুকে ঠাঁই হয়নি দুই শিশুর। গর্ভধারিণী মায়ের স্নেহ না পেলেও নিঃসন্তান দুই মা তাদের বুকে তুলে নিতে চান। এ জন্য তাঁরা আদালতে আবেদনও করেছেন। বর্তমানে নগরের রৌফাবাদে সরকারি ছোটমণি শিশু নিবাসে রয়েছে শিশু দুটি। এর মধ্যে গতকাল সোমবার একটি শিশুকে নিঃসন্তান দম্পতির জিম্মায় লালন–পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের কর্নেলহাট এলাকার ডাস্টবিনে পাওয়া যায় আরেক নবজাতককে। তার নাম রাখা হয় ‘একুশ’। শিশুটিকে সন্তান হিসেবে লালন–পালন করতে ১৬ জন নারী আদালতে আবেদন করেছিলেন। ওই বছরের ২৯ মার্চ আদালত বিভিন্ন শর্ত দিয়ে শিশুটিকে লালন–পালনের জন্য এক দম্পতির জিম্মায় দেন। শিশুটি এখন ভালো আছে। একই বছরের ২৭ আগস্ট সকালে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড় এলাকায় নালার ভেতরে একটি কাগজের কার্টন থেকে এক দিন বয়সী নবজাতককে উদ্ধার করেন ভিক্ষুক মা-মেয়ে। আদালত ওই শিশুকে সরকারি উচ্চপদস্থ এক দম্পতির জিম্মায় দেন।

চট্টগ্রাম আদালতে (মহানগর হাকিম) দায়িত্বরত সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার জেসমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আবেদন দুটি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে এক কন্যাশিশুকে লালন–পালনের জন্য আদালত এক দম্পতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে শিশুটিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আরেক শিশুর বিষয়ে এখনো শুনানি হয়নি।

চলতি বছরের ২০ আগস্ট ভোর পাঁচটার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে পড়ে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ও তাঁর সদ্যোজাত কন্যাশিশুটি। ওই সময় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান মা ও শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর কোনো ঠিকানা নেই। শিশুটিকে কাছে নিলেই ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। 

নগরের বন্দরটিলা থেকে গত ১৬ আগস্ট এক দিন বয়সী একটি ছেলেশিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন নীলুফার আক্তার নামের এক নারী। পরদিন শিশুটিকে ফেলে তিনি উধাও হয়ে গেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে চিকিৎসক, সেবিকাদের মায়ায় ৫২ দিন ধরে বেড়ে উঠেছিল শিশু দুটি। দেড় মাস পর ৩ অক্টোবর শিশু দুটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ছোটমণি নিবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গতকাল নগরের রৌফাবাদে ছোটমণি নিবাসে গিয়ে জানা যায় শিশু দুটি সুস্থ রয়েছে। সেখানকার মেট্রন আফসানা ইসলাম বলেন, শিশু দুটি হাত-পা নেড়ে খেলে। তাদের যত্নের ঘাটতি নেই। 

বন্দরটিলা থেকে আসা এক নারীর ছেলেশিশুর জন্য আবেদন করেছেন এক দম্পতি। ছোটমণি নিবাসে শিশুটির নাম দেওয়া হয় আদিল আদনান। বিয়ের পর ওই দম্পতি সন্তানের জন্য ১৩ বছর অপেক্ষা করেছিলেন। চাকরিজীবী ওই ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এই শিশুটিকে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি দিতে চান।

ছোটমণি নিবাসে ডবলমুরিং থেকে উদ্ধার শিশুটির নাম দেওয়া হয় রোকাইয়া রওনক। তাকে লালন–পালনের জন্য ২১ অক্টোবর আদালতে আবেদন করেন নগরের চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা আবদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার। স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর স্ত্রী স্কুলশিক্ষক। দুজনেই নিজেদের নিঃসন্তান দম্পতি দাবি করেছেন। 

স্কুলশিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, ১০ বছর ধরে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেই সম্ভাবনা তাঁদের নেই। তাই নবজাতকটিকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন–পালনের দায়িত্ব পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। গতকাল আদালত শিশুটিকে তাঁদের লালন–পালনের আদেশ দেওয়ায় খুশি তাঁরা।