Thank you for trying Sticky AMP!!

কক্সবাজারে ‘ওসি প্রদীপ বাহিনীর’ ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

কক্সবাজারের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মানবন্ধন। আজ সোমবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে

সাত বছরের ছোট্ট শিশু মোস্তাকিনের এক হাতে নিহত বাবার ছবির পোস্টার, অন্য হাতে ‘খুনি প্রদীপ বাহিনীর ফাঁসি চাই’ লেখা পোস্টার। মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ‘বাবা হত্যার বিচার চাই’ স্লোগান। এই দাবি মোস্তাকিনের মতো আরও অনেক শিশুর। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে আজ সোমবার দুপুরের দৃশ্য এটি।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার বিচার চেয়ে সেখানে চলছিল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। সেই মানববন্ধনে মা রোকিয়া বেগমের সঙ্গে উপস্থিত ছিল শিশু মোস্তাকিনও। মোস্তাকিনও তার বাবার হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেয়।

মোস্তাকিনের বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ায়। মোস্তাকিনের মা রোকিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ হোসেনকে তুলে নিয়ে যায় টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ। এরপর ওই থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে পুলিশ মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিয়ে তাঁর স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। যদিও তাঁর স্বামী ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। আজ সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ অন্যান্য আসামি বিচার (সাক্ষ্য গ্রহণ) শুরু হয়েছে। রোকিয়া বলেন, ‘আমরা ওসি প্রদীপের ফাঁসির দাবিতে এই মানববন্ধনে যোগ দিয়েছি।’

মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন একই গ্রামের আরেক গৃহবধূ সামছুন্নাহার (২৬)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাঁর বড় ভাই নুর মোহাম্মদকেও হত্যা করে প্রদীপ বাহিনী। অপরাধীদের ফাঁসি চাইতে তিনিও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন। সামছুন্নাহারের সঙ্গে আছে তাঁর সাত বছরের মেয়ে মাহির। তার হাতেও ছিল পোস্টার।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুরু হয়েছে সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। ২৪ ও ২৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন দিনে চলবে মোট ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ।

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জন আসামি উপস্থিত।

আদালত থেকে কয়েক শ গজ দূরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর এলাকায় চলছিল আসামিদের ফাঁসির দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানববন্ধন।

‘অসহায় নির্যাতিত জনগণ’–এর ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। মানববন্ধনে সিনহা হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি চেয়ে বক্তব্য দেন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ নামে নাগরিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহসীন শেখ, নারীনেত্রী সফিনা আজিম, ব্যবসায়ী কফিল মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা নুর বক্স প্রমুখ।

ঘটনাস্থলে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক নির্মূলের নামে টেকনাফে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। বহু নারীকে ধর্ষণ ও ইয়াবা দিয়ে মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়। সর্বশেষ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আলোচনায় আসে ওসি প্রদীপ বাহিনী। আমরা প্রদীপ বাহিনীর ফাঁসির দাবি এবং সিনহা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। পুলিশের মামলায় সিনহার  সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও আটক করে পুলিশ। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।