Thank you for trying Sticky AMP!!

কক্সবাজারে পানিবন্দী লাখো মানুষ খাদ্যসংকটে

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী। শুক্রবার দুপুর ১২টায় উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায়

টানা চার দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে  কক্সবাজারে জেলার ৯টি উপজেলার পাঁচ শতাধিক গ্রামের অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী থাকায় গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ও পানিতে তলিয়ে থাকায় চলাচলের কোনো উপায় নেই। এতে এসব গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বিপর্যয় ঠেকাতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠে নেমেছে। তারা দুর্গত এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছে। পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকেও সরিয়ে আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, জেলার পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলার অন্তত ৫২টি ইউনিয়নের ৫৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের কষ্ট লাঘবে ইতিমধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু বেসরকারি সংস্থা, কতিপয় ব্যক্তি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় শুক্রবার থেকে বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৪ দিনে জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৯২ মিলিমিটার। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৯টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নে ৭৬ হাজার ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের দুই লাখের বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দী। বানের পানিতে বিলীন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৬ হেক্টর মৎস্য ঘের ও পুকুর। পানিতে তলিয়ে আছে ৫ হাজার ৭৫৯ হেক্টর চাষের জমি। গত চার দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও ঢলের পানিতে ভেসে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জুলাই পাহাড়ধসে ও বানের পানিতে ছয় রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। একই দিন মহেশখালীতে বাড়ির দেয়ালচাপায় এক নারী ও টেকনাফে পাহাড়ধসে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, ২৮ জুলাই পাহাড়ধসে টেকনাফের হ্নীলায় একই পরিবারের পাঁচজন ও মহেশখালীতে একজন মারা যায়। ওই দিনই উখিয়াতে বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং ঈদগাঁওয়ে বানের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়। ২৯ জুলাই চকরিয়ায় এক শিশু বাড়ির উঠানে জমে থাকা পানিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। ৩০ জুলাই বানের পানিতে খেলতে গিয়ে পেকুয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এখলাছ উদ্দিন বলেন, টানা বর্ষণে ৪৯১ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৭৬২ হেক্টরের আমনের বীজতলা ও ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ৩১২ হেক্টর জমির সবজিখেত তলিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ২৪ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ২৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কারে ৬ কোটি টাকা লাগবে।

বন্যার পানি সরে গেছে। এখন ফুটে উঠেছে ক্ষত চিহ্ন। স্রোতের তোড়ে সড়ক ভেঙে গেছে। আজ শুক্রবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল সড়কে

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় জেলায় ৫৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ হাজার ৫৬৫ জন লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। তাদের রান্না করা খবারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে।