Thank you for trying Sticky AMP!!

কবিরের দিনের আয় এখন ৬০ টাকা

গত বছর লকডাউনে অনেকেই সাহায্য নিয়ে এসেছিলেন। এবার কোনো সাহায্য নেই। পেটের টানে পথে নামছেন দরিদ্র মানুষ।

রিকশাচালক কবির ভাতের খরচও জোটাতে পারছেন না। পেছনের ভ্যানচালকেরাও কর্মহীন। নারায়ণগঞ্জে ডিআইটি করিম মার্কেট এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায়

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ শহরের সড়কগুলো। যাঁরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন, তাঁদের অধিকাংশই তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক। সবাই ইফতারের আগে বাড়ি ফিরতে চান। শ্রমিকদের বাইরে কেউ কেউ ইফতারি কিনছেন সড়কের পাশের রেস্তোরাঁগুলো থেকে। বাহারি সব ইফতারি হাতে তাঁরাও গন্তব্যে ছুটছেন। একই সময়ে শহরের এক সরু গলিতে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে নির্বিকার বসে আছেন কবির হোসেন (৩৮)। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই তাঁর।

শহরের ডিআইটি করিম মার্কেট এলাকায় দেখা হয় কবিরের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন রিকশা চালান। একার রোজগারে ছয়জনের সংসার চলে। পড়াশোনা চলে চার ছেলেমেয়ের। পরিবারের খাবার জোটাতে লকডাউনের মধ্যেই রোববার সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। ১০ বছরের ছোট মেয়েকে কথা দিয়ে এসেছেন ইফতারের আগেই মেয়ের পছন্দের জিলাপি নিয়ে ফিরবেন। তবে লকডাউনে শহরের সড়কগুলো প্রায় জনশূন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে জমা টাকার অতিরিক্ত ষাট টাকা উপার্জন হয়েছে। এটাই তাঁর দিনের আয়। এই টাকা দিয়ে চাল–ডাল কিনবেন, নাকি মেয়ের আবদার পূরণ করবেন—রিকশায় বসে সে হিসাব মেলাচ্ছিলেন কবির। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর ইফতারের আগে বাড়ি ফিরবেন না। কিছু একটা বলে মেয়েকে বোঝাবেন।

কবির বলেন, গত লকডাউনের পর যে চাল ৩৫ টাকায় কিনেছেন, সেই চাল এখন ৫৪ টাকা। পুলিশ রিকশাগুলোকে ধরে ধরে জরিমানা করছে। অথচ নিম্ন আয়ের মানুষ লকডাউন মানবে কী করে? কেউ সাহায্য নিয়েও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না।

কবিরের মুখে সাহায্যের কথা শুনে এগিয়ে আসেন পাশে বসে থাকা কজন ভ্যানচালক। তাঁদেরই একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব রমজান আলী প্রশ্ন করেন,‘আপনি কি সাহায্য–সহযোগিতা কিছু করবেন?’ সাহায্যের কথা শুনে আশায় আশায় আরও এগিয়ে আসেন আলী হোসেন, ইকবাল মিয়া, রানা মিয়াসহ কয়েকজন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা কিছুটা হতাশই হন। কথার ফাঁকেই ক্ষোভ ঝাড়েন রানা মিয়া, ‘আমাগো না খাইয়া অভ্যাস আছে। এসব সাহায্যের আশা ছাইড়া দিছি।’