Thank you for trying Sticky AMP!!

কমছে আলুর দাম, বিপাকে চাষিরা

১৩ থেকে সাড়ে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। তারাগঞ্জ বাজার, রংপুর, ৩১ জুলাই

রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে আলুর দাম কমছে। ২০ দিন আগেও স্থানীয় হাটবাজারের আলুর আড়তে ও হিমাগারগুলোতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলু বিক্রি হয়েছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এখন প্রতি বস্তা আলু গড়ে ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

কয়েকজন চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে সারা দেশের মতো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে বিপুল পরিমাণ আলুর চাষ হয়। বিগত বছরে আলুর ভালো দাম থাকায় চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। শুধু চাষিরা নন, ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করেন আলুর চাষ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও বদরগঞ্জে ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে গত মৌসুমে আলুর চাষ হয়। বেশি দাম পাওয়ার আশায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা দুই উপজেলার ৬টি হিমাগারে আলু রাখেন। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। তারাগঞ্জের তিনটি হিমাগারে এখন প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। বদরগঞ্জে তিনটি হিমাগারে ২ লাখ ৮০ হাজার বস্তা আলু রয়েছে।

হিমাগার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোয় এ সময় আলু কেনাবেচার চাপ থাকলেও এবার তা হয়নি।

তারাগঞ্জের সিনহা হিমাগারের সামনে কথা হয়, মেনানগর গ্রামের আলুচাষি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ১৫ একর জমিতে আলুর চাষ করেছিলেন। সিরাজুল বলেন, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার আলু উৎপাদন খরচ হয়েছে বেশি। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা সাদা জাতের আলু উৎপাদন ও হিমাগারে রাখতে খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা। তা বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। লাল জাতের এস্ট্রারিক্স, কার্টিনাল জাতের আলুও উৎপাদন ও রাখতে খরচ হয়েছে ৮৫০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।

হিমাগারের বারান্দায় বসে হাজীপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, ‘ভাইজান, মুই গতবার আলু বেচে কেজিতে ২০ টাকা লাভ করছুন। সেই লাভের টাকা দিয়া মাইনসের তিন একর জমি বর্গা নিয়া আলুর আবাদ করছুন। বেশি দামে বেচার আশায় সেই আলু হিমাগারোত থুছুন। কিন্তু বাজারোত আলুর দাম খুব খারাপ। মনে হয় এইবার ধরা খাবার নাগবে। দাম কম হওয়ায় কোল্ডস্টোরেজও ক্রেতা নাই, আলু নিয়া হামরা খুব সমস্যায় আছি।’

তারাগঞ্জের এনএন হিমাগারের সামনে কথা হয়, মেনানগর গ্রামের কৃষক আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৮০ শতক জমিত ৯০ বস্তা সাদা আলু পাছনু। তিন বস্তা খাবার থুইয়া বাকিগুলা কষ্ট করি কোল্ডস্টোরেজে ঢুকি থুছুন। এলা বেচবার চায়ছুন, তা ভালো দাম পাওছুন না। বাজারোত যে দাম এ দামে আলু বেচাইলে মোর বড় লোকসান হইবে।’

সরকারপাড়া গ্রামের আরেক আলুচাষি শামছুদ্দোহা সরকার বলেন, ‘এক বস্তা সাদা আলু আবাদ করতে খরচ হইছে ৪৫০ টাকা। হিমাগার ভাড়া ২৫০ টাকা। একটি খালি বস্তা কিনবার নাগছে ৫০ টাকা করি। ভ্যান ভাড়া দিবার নাগছে প্রতি বস্তায় ২০ টাকা। এখন ফির সেই আলু বিক্রি কইরার নাগেছে ৬০০ টাকা বস্তায়। এবার চাষির মরণ ছাড়া উপায় থাকপার নেয়।’

তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার হিমাগারগুলোতে ১২ টাকা থেকে সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে লাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে। আর দুই উপজেলার হাটবাজারগুলোতেও ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ টাকা দরে পাইকারের আলু বিক্রি করছেন।

শনিবার তারাগঞ্জ আলুর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মিলন মিয়ার কাছে আলু বিক্রির টাকা নিতে এসেছেন কাশিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘বাবা, হামার কৃষকের পেকে তো কায়ও তাকায় না। গতবার আনা আলুর ভাল দাম পাছনো এবার ফির নেওছে না।’

ব্রার্দাস হিমাগারের পরিচালক ইকরামুল হক জানান, এবার আলু বেচাকেনা একেবারেই নেই। হিমাগারের ৭৫ হাজার আলুর বস্তার মধ্যে এখনো ৭০ হাজার আলুর বস্তা অবিক্রীত অবস্থায় আছে।

এনএন হিমাগারের ব্যবস্থাপক আনারুল ইসলাম জানান, এখন ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কেনাবেচা চলছে। এ দামে চাষিরা আলু বিক্রি করছেন না। ফলে হিমাগার থেকে তেমন আলু বের হচ্ছে না। হিমাগারে রাখা ২ লাখ ১৩ হাজার বস্তার আলুর মধ্যে ৩২ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। গত বছর এ সময় হিমাগারে রাখা আলুর কেজি ছিল ২১-২২ টাকা।

বদরগঞ্জ হিমাগারের মালিক বাসুদেব রায় বলেন, প্রতিটি হিমাগারের মালিক আলুর বিপরীতে কৃষকদের ঋণ দিয়েছেন। এভাবে বাজারে আলুর দর নামতে থাকলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বের করার আশা ছেড়ে দেবেন। এতে হিমাগারের মালিকদেরও লোকসান গুনতে হবে।

তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ‘আলুর মৌসুমে বীজের দামও বেড়ে যাওয়ায় আলুর উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া অন্যবারের মতো এবার বৃষ্টি না হওয়ায় শাকসবজিও নষ্ট হয়নি। ফলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও শাকসবজির বাম্পার ফলনে আলুর দাম কম।’