Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কম্বলকোনা দিয়া ঠান্ডা থাকি বাঁচাইনেন’

করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব মেনে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। আজ শনিবার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে

এবাড়ি–ওবাড়ির মুষ্টির চালে হাঁড়িতে আগুন জ্বলে মহুবোন বেগমের (৮০)। ময়লা–পাতলা পুরোনো ছেঁড়া শাড়ি গায়ে চাপিয়ে কম্বল নিতে এসে ঠনঠন করে কাঁপছিলেন তিনি। কম্বল পেয়ে চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। সেটি গায়ে জড়িয়ে মহুবোন বললেন, ‘ঠান্ডা বাতাসোত শরীর কাহিল হয়্যা গেইছে। খড়কুটাত আগুন নাগে (জ্বলে) গাওত তাপ দেউচি। কম্বল-জাম্পার নাই, রাইতোত খুব কষ্টে আছনুং (ছিলাম)। কম্বলকোনা দিয়া ঠান্ডা থাকি বাঁচাইনেন (বাঁচালেন)।’

মহুবোন বেগমের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার জুম্মাপাড়া গ্রামে। ২২ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও বয়সের ভারে এখন আর পারেন না। আজ শনিবার তারাগঞ্জের ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কম্বল নিতে এসেছিলেন তিনি। সেখানে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০০ জন শীতার্তকে কম্বল দেওয়া হয়।

মহুবোনের মতো শীতের কষ্টে থাকা ২০০ মানুষের চোখেমুখে কম্বল পেয়ে হাসির ঝিলিক ফুটেছে। কেউ লাঠিতে ভর করে, কেউবা হেঁটে এসেছিলেন কম্বল নিতে। কম্বল হাতে পেয়ে যেন কারও চোখের কোণে আনন্দের জল, কারও মুখে রাতভর আরামে ঘুমানোর খুশি।

কম্বল নিতে এসেছিলেন চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের চিনিমাইও (৬৬)। তাঁর স্বামী–সন্তান নেই। ভাঙাচোরা ঘরে ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে রাত্রি যাপন করেন। কম্বল হাতে পেয়ে চিনিমাই হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, ‘একনা কম্বলের জন্যে মেলাজনের কাছোত হাত পাতছুং, কায়ও দেয় নাই। গরম কাপড়ের জন্যে রাইতোত নিন (ঘুম) যাবার পাও নাই। এই কম্বলকোনা গাওত দিয়া ঠান্ডা থাকি বাঁচিম। তোমার তকনে দোয়া করিম।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণের আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুস্থ শীতার্তদের স্লিপের সঙ্গে দেওয়া হয় মাস্ক।

কাঠমিস্ত্রির কাজ করে স্ত্রী–সন্তানদের পেটে ভাত দিতেন সরকারপাড়া গ্রামের এমদাদুল হক (৪৫)। এক বছর আগে ঘরের চাল নির্মাণের সময় ওপর থেকে পড়ে এক পা ভেঙে যায় তাঁর। কোমরেও আঘাত পান তিনি। লাঠিই এখন তাঁর চলাফেরার একমাত্র ভরসা। আয় বন্ধ হওয়ায় দুবেলার খাবার জোটে না। কম্বল হাতে পেয়ে অপলক চোখে চেয়েছিলেন এমদাদুল হক। কেমন লাগছে, প্রশ্ন করতেই তাঁর চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে। এমদাদুল বলেন, ‘শীতের কাপড় কিনার টাকা আছলো না। ঘুমাইতে খুব কষ্ট হছলো। তোমরা ডাকে আনি কম্বল দেনেন। খুশিতে চোখোত পানি আসি গেইছে।’

সরকারপাড়া গ্রামের সইমা বেগম (৭৫) বলেন, ‘২০ বছর আগোত স্বামী মরছে। ভিক্ষ করি খাও। রাইত হইলে ভাঙা টিনের চালাত হু হু করি বাতাস ঢুকে। ঠান্ডাত নিন আইসে না। মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছোত গেছনু, কায়ও মোর কথা শোনে নাই। ঠান্ডাতে কোঁকড়া নাগি আছনু। তোমার কম্বলকোনা গাওত দিয়া জান বাঁচাইম।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণের আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুস্থ শীতার্তদের স্লিপের সঙ্গে দেওয়া হয় মাস্ক। মাস্ক পরে তাঁরা কম্বল নিতে আসেন।

ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ওই কম্বল তুলে দেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, প্রথম আলো তারাগঞ্জ বন্ধুসভার আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, মানব কল্যাণ ঘর সামাজিক সংগঠনের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জেমিন শেখ, সাংবাদিক আরিফ শেখ, নাহিদুজ্জামান, খলিলুর রহমান, বন্ধুসভার সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, মিহাদ সরকার, মামুন সরকার, নাঈম ইসলাম, খাদিজা আক্তার, অনামিকা আক্তার, জাজিয়া আক্তার, নুর আলম, রোমানা আক্তার ও প্রথম আলোর প্রতিনিধি রহিদুল মিয়া।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।

অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।