Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মডেল হতে পারে ঝিনাইদহের 'আনন্দবাগ'

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আনন্দবাগ গ্রামে প্রবেশের তিন রাস্তার মোড়ে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। ছবি: আজাদ রহমান

গ্রামে প্রবেশের তিনটি রাস্তা, তিন রাস্তার মোড়েই বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। যাঁরাই গ্রামে প্রবেশ করছেন, তাঁদের পরিচয় এবং প্রয়োজন নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এরপর আগন্তুকের গোটা শরীর জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করার পরই গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। আর গ্রামের বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন বুঝে বের হতে দেওয়া হলেও গ্রাম থেকে বাইরে যেতে ও প্রবেশের সময় শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে জীবাণুনাশক। স্থানীয়ভাবে লকাডাউন করায় খেটে খাওয়া দরিদ্র দিনমুজুর পরিবার যাতে বিপাকে না পড়ে, সে জন্য তালিকা করে পরিবারপ্রতি ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার তেলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ চিত্র ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আনন্দবাগ গ্রামের।

আনন্দবাগ গ্রামে ১৪০টি পরিবার রয়েছে। দুই হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। গ্রামে প্রবেশের তিনটি রাস্তা রয়েছে। সব রাস্তার মোড়ে গ্রামের ছেলেরা কাজ করছে। মোড়ে বাঁশ বেঁধে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যে কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে হলে এই চৌকিতে থামতে হবে। সেখানে পটাশ মিশ্রিত পানি, স্যাভলন মিশ্রিত পানি, সাবান আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে বসে আছেন যুবকেরা।

আনন্দবাগ গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা পালা করে গ্রামটিকে নজরদারি রাখছেন। গ্রামটি ‘লকডাউন’ করতে যা যা করণীয়, সবই তাঁরা করছেন। গত তিন দিন তাঁরা এভাবে নিজেদের গ্রামটিকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।

আজ শনিবার সরেজমিন আনন্দবাগ গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের পাইকপাড়া মোড়ের তল্লাশিচৌকিতে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষক রুহুল আমিন। তাঁদের কাছে পৌঁছানো মাত্র দুই যুবক ছুটে আসেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবাণুনাশক দিয়ে পুরো শরীর স্প্রে করে দেওয়া হলো। এরপর সাংবাদিক শুনতেই যুবকেরা বললেন, তাঁরা এভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন। আনন্দবাগ গ্রামে যে কাউকে প্রবেশের আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়।
গ্রামের আরেক মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াদেহ নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গেও রয়েছেন কয়েকজন যুবক। মুখে মাস্ক পরে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের খয়েরতলা মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন মেহেরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি।

আনন্দবাগ গ্রামের একটি চৌকিতে বসে কথা হয় শিক্ষক রুহুল আমিন ও আবদুল ওয়াহেদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, গত ২৫ মার্চ তাঁরা গ্রামের মসজিদে বসে নিজেদের মধ্যে কীভাবে গ্রাম সুরক্ষিত রাখা যায় সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় সরকারের পাশাপাশি নিজেদেরও নিজেদের গ্রাম বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে গত ২৬ মার্চ থেকে আনন্দবাগ গ্রামটি স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হয়। লকডাউন করার আগে গ্রামবাসীকে দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। এরপর ২৬ মার্চ দুপুরের পর থেকে গ্রামের কেউ খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেরোতে পারছেন না। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কেউ বাইরে গেলে তার খোঁজখবর রাখছেন গ্রামবাসী।

গ্রামের বাসিন্দা মোবাশ্বের হোসেন জানান, এভাবে গ্রামটি লকডাউন করে দেওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এই কথা চিন্তা করে তাঁরা হতদরিদ্র মানুষের একটা তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকায় ২০টি পরিবারের নাম রয়েছে। এ অবস্থা যত দিন চলবে, তত দিন গ্রামের অন্যরা তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে সহায়তা নিয়ে যাবেন।
তিনি জানান, আজ বিকেল থেকে একেকটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার তেলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেওয়া হবে। এসব জিনিস কেনাকাটা করতে বাজারে লোক পাঠানো হয়েছে।

তালিকাভুক্ত এমন একজন হচ্ছেন এনামুল হক। দিনমজুর এনামুল কাজে না গেলে ঘরে রান্না হয় না। তাঁকে তালিকায় আনা হয়েছে। এ তালিকায় এসেছেন মহাসিন আলী নামের এক রিকশাচালক।
মহাসিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তাঁর কমপক্ষে তিন শ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে চলে চারজনের সংসার চলত। গ্রামবাসী আজ থেকে সহায়তা দিতে চেয়েছে। আপাতত বেঁচে থাকার মতো ব্যবস্থা হলেই তিনি খুশি।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুলতান আহমেদ বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্রামবাসীর এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন জরুরি প্রয়োজন বাধাগ্রস্ত না হয়।