Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে দ্বিগুণ আশ্রয়কেন্দ্র

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিকেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষকে সতর্ক করে সংকেত প্রচার করছেন। আজ সোমবার বিকেলে বরগুনা সদরের পরীরখাল গর্জনবুনিয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় তৈরি হয়েছে আরেক দুর্যোগের আশঙ্কা। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় তাই জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে রাখার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রস্তুত করা হচ্ছে স্কুল–কলেজ। প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকেরাও। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উদ্বেগ তত বাড়ছে।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত অবস্থান ও গতি–প্রকৃতি অনুযায়ী আম্পান বাংলাদেশের দিকেই আসছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বুধবার ভোরের দিকে। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে উপকূলীয় ১৪টি জেলা থেকে হুঁশিয়ারি সংকেত সরিয়ে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল থেকে সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় ১৪ জেলা
৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর; খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম।

আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা
দেশজুড়ে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যস্ত। করোনার প্রভাবে এখন দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা এলোমেলো। এই অবস্থার মধ্যেই প্রকৃতির আরেক বিপদ ঘূর্ণিঝড় আম্পান হানা দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনার বিস্তাররোধে সরকার জনসমাগম এড়াতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উপকূলের কয়েক কোটি লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হতে পারে। এতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে। এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে লোকজনকে আশ্রয় নিতে হবে। এ জন্য প্রশাসনের উচিত আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা।

স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, এটা নিশ্চিত করতে না পারলে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। অবশ্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগের ৬ জেলায় স্বীকৃত আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ৪৪৬টি। এর মধ্যে ১২০টি শুধু আশ্রয়কেন্দ্র। বাকি ২ হাজার ৩২০টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার।

এ প্রসঙ্গে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, এবার করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ওই আড়াই হাজার আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরেও আরও ২ হাজার ৫২৬টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর ফলে ৪ হাজার ৯৭২টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হবে।

উপকূলে প্রস্তুতি চলছে
বরগুনার জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭ নম্বর সংকেত দেওয়ার পর আমরা এখন মূলত মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছি। একই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছি। সংকেত বেড়ে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ওঠার পর মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া বাধ্যতামূলক।’

বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস ও সিপিসির সমন্বয়ে দুই দফায় সভা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনা খাবার মজুত, মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে বিপদসংকেত দেখাতে বলা হলে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে। সেখানে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পানীয় জলের ব্যবস্থা এগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিকেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যন্ত এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক করছেন।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশালের উপপরিচালক আবদুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২৫ হাজার ৫ জন এবং উপকূলীয় ১৩ জেলায় ৫৫ হাজার ২৬০ জন সিপিসির স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এসব স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আম্পান কী ক্ষতি করতে পারে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে এটি যদি আঘাত হানে, তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আগের ঝড়গুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, এ ধরনের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়। ঘরবাড়ি, গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।

তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার ওপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার ওপরে থাকে, তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরনের একটা ঘূর্ণিঝড়। দুর্যোগকালে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং তথ্যপ্রবাহ অবাধ হওয়ায় দেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কমেছে।