Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে কারও মন ভালো থাকছে না

প্রতীকী ছবি

আবির হোসেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। করোনার কারণে তিন মাস ধরে সে ঘরবন্দী। কাপড়ের ব্যবসায়ী বাবার দোকানও টানা বন্ধ থেকেছে। ঘরভাড়া বাকি পড়েছে তিন মাসের। পরিবারে অশান্তি লেগেই রয়েছে।

আবিরের মা রাবেয়া খাতুন গৃহিণী। ঘর সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যেও তাঁর চোখে ধরা পড়ে, ছেলের আচরণ পাল্টে যাচ্ছে। সারা দিন সে বিছানা ছাড়তে চায় না। কিছু বললেই কেঁদে ফেলে। আগে ছেলে এমন করত না। এখন অহেতুক ভয় পায়, সারাক্ষণ আতঙ্কিত একটা ভাব, মন খারাপ। প্রথম আলোকে এই মা বলেন, ‘খেতে চায় না কিছু। ছেলেকে নিয়ে কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসক গত মাসের প্রথম সপ্তাহে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন। তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলেরও সংক্রমণ ধরা পড়ে। ছেলেটির কিডনির সমস্যা আছে। মা ও ছেলে দুজনই সেরে উঠেছেন। তবে এই মা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে অনেক শিশু-কিশোর করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাচ্ছে। অন্য কোনো রোগ থাকলে এমনটা বেশি হয়। ছেলেকে নিয়ে তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন। এখন সেরে ওঠার পরও তাঁর মন ভয় যাচ্ছে না। তাঁকে আবার হাসপাতালে কাজে যেতে হবে। আবার যদি তাঁর এবং তাঁর থেকে ছেলের কোভিড হয়?

এই প্রতিবেদক গত কয়েক দিনে নানা শ্রেণি–পেশার অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই বলেছেন, সব সময় উদ্বেগে ভোগেন। আর দেশের অন্তত পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের মধ্যে মৃত্যুভয়, আতঙ্কগ্রস্ততা, বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। শিশু-কিশোরেরা সবচেয়ে বেশি দিশাহারা।

>

উদ্বেগ, আতঙ্ক, মৃত্যুভয়, একঘেয়ে জীবন। অবসাদ, বিষণ্নতা বাড়ছে। আত্মহত্যাও ঘটছে। আগামীর দুশ্চিন্তা আর্থিক টানাটানি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোছাম্মাৎ নাজমা খাতুন বলছেন, করোনাকালে মানসিক অসুস্থতার হার অনেক বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের মনোবিদদের সমিতি বলছে, লেখালেখিতে দেখা যাচ্ছে, বিষণ্নতা, আত্মহত্যার প্রবণতা—এসব বেড়ে গেছে।

এই অধ্যাপক বলেন, এ দেশেও এসব সমস্যা বেড়ে গেছে। অনেকের মধ্যেই মৃত্যুভয় বেড়েছে। কখনো মনে হতে পারে, হৃদ্‌রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা প্যানিক ডিসঅর্ডার—আতঙ্কের অভিঘাত। কেউ ১০ মিনিটের মধ্যে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কারও মনে হতে পারে, অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, মাথা ঝিমঝিম করছে। পড়েও যেতে পারেন।

অধ্যাপক নাজমা আরও বলেন, যাঁরা স্বভাবত উদ্বেগপ্রবণ বা মানসিকভাবে দুর্বল, তাঁরা আরও কাতর হয়ে পড়ছেন। করোনাকালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর বিভাগে অনেক গবেষণা চলছে। সেগুলো চূড়ান্ত হলে প্রভাবগুলো আরও ভালো করে বলা যাবে। করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের মানসিক অবস্থাও জানা দরকার।

গত ৪ মে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন পুলিশ কনস্টেবল তোফাজ্জল হোসেন। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, তাঁর করোনা সংক্রমণ শনাক্তকরণের পরীক্ষা হয়েছিল। জানা যায়, রোগটি তাঁর হয়নি। তারপরও তিনি হতাশা কাটাতে পারেননি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালে মর্গে যত মরদেহ আসছে, সেগুলোর বেশির ভাগ গলায় ফাঁস দিয়ে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার শিকার। আগে বেশি আসত মারামারি বা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির লাশ, সেটা এখন কমে গেছে। তবে আত্মহত্যা আগের চেয়ে বেড়েছে কি না, সে হিসাব তাঁরা এখনো করে সারেননি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকারের মতে, করোনাকালে জীবন হয়েছে একঘেয়ে। কারোরই মন ভালো থাকছে না। আছে অর্থনৈতিক সংকট। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাপনের মান নেমে যেতে বাধ্য। সুতরাং, এখন থেকে বেহিসাবি খরচ কমানোর অভ্যাস করতে হবে। নিজেদের তৈরি করতে হবে।