Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে বাড়তি আয় নারীদের, সংসারে স্বস্তি

রংপুরের তারাগঞ্জে নারীরা সেলাই ও শাড়িতে নকশা তোলার কাজ করে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা

করোনাকালে কর্মহীন হয়ে অনেকে অর্ধাহারে–অনাহারে রয়েছেন। তবে ফেন্সি খাতুন, তহমিনা বেগম, বিউটি খাতুনের সংসারে করোনা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, তাঁরা সেলাই ও শাড়িতে নকশা করে সংসারে বাড়তি টাকা আয় করছেন। তাঁদের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায়। তাঁদের মতো উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক নারী সেলাই ও শাড়িতে নকশা তোলার কাজ করে দারিদ্র্যকে জয় করেছেন। সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা।

উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পাশাপাশি মুন্সিপাড়া, ময়দানপাড়া ও উত্তরপাড়া গ্রাম। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ বাড়িতে রয়েছে টিনের চালা। খড়ের কুঁড়েঘর নেই বললেই চলে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে উত্তর অঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ কর্মসূচির আওতায় তারাগঞ্জ কার্যালয়ে পাঁচজন নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে শাড়িতে কারচুপি ও নকশার কাজ শুরু করেন। এখন ওই তিন গ্রামের দুই শতাধিক নারী শাড়িতে কারচুপি ও নকশার কাজ করছেন। তাঁদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাশের শিকারপাড়া, দক্ষিণপাড়া, জিগারতলা, ডাঙ্গাপাড়া, দোলাপাড়া, প্রামাণিকপাড়া, জর্দিপাড়া গ্রামের নারীরাও ওই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁরা শাড়িতে কারচুপি ও নকশার কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন।

গত রোববার সকালে ময়দানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির নারীরা শাড়িতে নকশা তোলার কাজ করছেন। সুচ দিয়ে চুমকি, জরি, পুঁতি বসানোর কাজে ব্যস্ত সবাই। একটি সাধারণ জর্জেট শাড়ি নকশার কাজের পর অসাধারণ হয়ে উঠছে।
ওই গ্রামের স্বামীহারা রহিমা খাতুনের (৩৬) কোনো জমি ছিল না। তিন বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতেন। এখন তাঁর বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গাভি আছে। করোনার এই সময়েও শাড়িতে নকশার কাজ করে মাসে ৬ হাজার টাকা আয় করছেন।

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে মাহমুদা খাতুনের বাড়ি। চার বছর আগেও তাঁদের সংসারের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা জুটত না। প্রায়ই উপোস থাকতে হতো। শাড়িতে নকশার কাজ করে তিনিও এখন মাসে ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। তাঁর দুই সন্তান স্কুলে পড়ছে। বাড়িতে একটি খামারও করেছেন।
কথা হয় বুড়িরহাট গ্রামের আছমা খাতুন (৩৩) ও জোবেদা খাতুনের (৩৬) সঙ্গে। তাঁরা জানান, কারচুপির কাজ তাঁদের নতুন জীবন দিয়েছে। আগে সংসারের বোঝা হয়ে শুধু স্বামীর উপার্জনে খুব কষ্ট করে চলত। এখন মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

শিকারপাড়া গ্রামের আয়েশা খাতুন বলেন, উজ্জ্বল রঙের ওপর নকশা ভালো দেখা যায়। একটি জর্জেট কিংবা টিস্যু শাড়িকে নকশা কাজে সাজাতে একজন কারিগরের পাঁচ-ছয় দিন সময় লাগে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাইকাররা অর্ডার দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ করে নেন। তাঁরাই এখন শাড়িতে কাজ করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ দেন। প্রতিটি শাড়ির মজুরি বাবদ কারিগরদের দেওয়া হয় ৬০০-৭০০ টাকা। একজন নারী কারিগর মাসে ৮-৯টি শাড়িতে নকশার কাজ করতে পারেন। গড়ে মাসে তাঁদের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় হয়।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, করোনার এই সময়ে তাঁরা ঘরে বসে নেই। শাড়িতে নকশা তোলার কাজ করে তাঁরা সংসারে অর্থের জোগান দিচ্ছেন। অনেকে ভাগ্য বদল করেছেন। অন্য এলাকার নারীরাও তাঁদের দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।