Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার দাওয়াই দিলেন তিনি

সাবরিনা আশা। ছবি: সংগৃহীত

‘করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আবার অনেকে মৃত্যুর চিন্তা করেন, ফেসবুকে সময় দিয়ে করোনার বিষয়ে নেতিবাচক খবর পড়েন ও শোনেন। আমি ১২-১৩ দিন ফেসবুক চালাইনি। এগুলো থেকে দূরে থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ শুনেছি। আর মানসিকভাবে শক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ।’

কথাগুলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাজয়ী শিক্ষার্থী সাবরিনা আশার (২৩)। তাঁর পরামর্শ, করোনা কোনো জটিল রোগ নয়, এটা শারীরিকভাবে যতটা না কাবু করতে পারে, তার চেয়ে পারিপার্শ্বিকতা মানসিকভাবে বেশি ভেঙে দিতে পারে। তাই মানসিকভাবে শক্ত থেকে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাবরিনা ৭ মে ঢাকার ইব্রাহিমপুর এলাকায় বাসায় অবস্থানকালে করোনার উপসর্গ প্রথম আন্দাজ করেন। এর আগে ২ মে থেকে তাঁর বাবার করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। ৯ মে তাঁর বাবার করোনা শনাক্ত হয় আর তাঁর শনাক্ত হয় ১১ মে। পরিবারের চার সদস্য একই জায়গায় থাকা সত্ত্বেও সাবরিনার বড় ভাই ও মায়ের একাধিকবার পরীক্ষা করা হলেও ফল নেগেটিভ আসে। ১১ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন সাবরিনা। ২০ ও ২১ মে পরীক্ষায় তাঁর করোনা নেগেটিভ আসায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে করোনামুক্ত ঘোষণা করে বাসায় পাঠানো হয়। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তবে তাঁর বাবা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনিও সুস্থ হওয়ার পথে।

সাবরিনা গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বাবার চাকরির কারণে তাঁরা ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁর বাবা যখন করোনায় আক্রান্ত হন, তখনই আশপাশের সবাই তাঁদের থেকে দূরে সরে যান। এরপর তাঁর করোনা শনাক্ত হলে তাঁদের পরিবার আরও বেশি বিপদে পড়ে। তাঁদের ভবনটিতে আরও ১২ থেকে ১৩টি পরিবার থাকে। কেউ তাঁদের কোনো খোঁজ নেননি। আশপাশের ভবনসহ বাসা লকডাউন করায় তাঁর মা, ভাই বাসা থেকে বেরই হতে পারতেন না। বাসা থেকে বের হয়ে তাঁকে ও তাঁর বাবাকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পোঁছাতে পারতেন না তাঁরা। এটা তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছে। এ সময় তাঁর পাশে থেকেছেন শুধু হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। তাঁদের দিয়ে ফলমূল কিনিয়ে এনেছেন। এতে তাঁরা একটুও আপত্তি করেননি।

সাবরিনা আরও বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই একটু দুর্বল চিত্তের। অসুস্থ থাকতেন মাঝেমধ্যে। এ কারণে তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর খুব ভয় হয়। পরে তিনি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে শক্ত হতে থাকেন। আর নেতিবাচক চিন্তা ও খবর পড়া থেকে দূরে সরে যান। তিনি বলেন, তাঁর বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা এ সময় তাঁকে প্রচুর সাহস জুগিয়েছেন। যখনই একটু খারাপ লাগা শুরু করত, তখনই কেউ না কেউ ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতেন। এটা তাঁর ভয় কাটতে সহায়তা করেছে।

করোনার চিকিৎসা নিয়ে সাবরিনা বলেন, খুব সাবধানে থেকে বিশ্রাম নিতে হয়। ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার খেতে হয়। তিনি এগুলো প্রচুর পরিমাণে খেতেন। আর তাঁর কাশি থাকায় এক ঘণ্টা পরপর গরম পানি দিয়ে গড়গড়া দিতেন। আর চিকিৎসকেরা নিয়মমতো কিছু ওষুধ দিতেন আর দুবার তাঁকে ইনজেকশন দিয়েছেন। এখন তিনি তাঁর বাবার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁর বাবাও সুস্থ হওয়ার পথে।