Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা ফিরে দেখা: জীবন বাঁচাতে তরুণদের উদ্যোগ

খুলনার দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের সদস্য সদানন্দ মণ্ডল রক্ত দিচ্ছেন। সম্প্রতি খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ। প্রকৃতির নির্মম ছোবল, খাওয়ার পানির জন্য নিরন্তর সংগ্রাম, নাজুক যোগাযোগব্যবস্থা আর নানান প্রতিকূলতা সঙ্গী করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত এখানকার মানুষ। তিনটি আলাদা দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই উপজেলার রাস্তাঘাট ভালো নয়। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে নেই সেতু। চিকিৎসা পেতে মানুষকে অনেক বেগ পেতে হয়।

সুন্দরবনের কোলঘেঁষা এই জনপদেও রয়েছে করোনার প্রকোপ। এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দাকোপের একদল স্বেচ্ছাসেবী তরুণ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধমূলক সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাবার বিতরণও করেছেন।
করোনাকালীন দাকোপের অনেক মানুষ চিকিৎসাসেবা ঠিকমতো পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবার সংকট আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে রক্তের সংকটে অনেক রোগী ও স্বজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে রক্ত পাচ্ছে না। যাঁদের কাছ থেকে রক্ত পাওয়া যায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁদের অনেকেই হাসপাতালে যেতে চাইছেন না।

এই সংকট কাটাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২০-২৫ জন উদ্যমী তরুণ মিলে ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। রক্তের সংকট কাটাতে ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে রোগীদের সেবা দিতে স্বতন্ত্র রক্তদান সংগঠন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারে চলতে থাকে আলাপ। স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে গড়ে তোলা হয় অনলাইনভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম। নাম ‘দাকোপ ব্লাড ব্যাংক গ্রুপ’। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে গ্রুপে যোগ করা হতে থাকে। চলতে থাকে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার তথ্য সংগ্রহ করার কাজ। কয়েক দিনের মধ্যে দুই শতাধিক রক্তদাতার তথ্য সংগ্রহ হয়। কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। এখন সেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সাংগঠনিক রূপ পেয়েছে।

রক্তদাতা ও সংগঠনের সদস্য হিসেবে এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন দাকোপের বিভিন্ন এলাকার ২৫০ তরুণ-তরুণী। আর ফেসবুক গ্রুপের সদস্য আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন সদস্য বাড়ছে।

রক্তদাতা ও সংগঠনের সদস্য হিসেবে এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন দাকোপের বিভিন্ন এলাকার ২৫০ তরুণ-তরুণী। আর ফেসবুক গ্রুপের সদস্য আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন সদস্য বাড়ছে।

সংগঠনটির সদস্যসচিব অসীম ঘরামী বলছিলেন, প্রাথমিক কাজ শেষে চলতি বছরের ১৫ মে দুজন স্বেচ্ছাসেবী অরিন্দম ও সুব্রত মণ্ডলের রক্তদানের মাধ্যমে দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

‘লাল ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক প্রতি প্রাণে’ স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মাস দুয়েক আগে সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি মনোনীত করা হয়েছে এবং সংগঠনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘দাকোপ ব্লাড ব্যাংক’।

গত জুন মাসে খুলনা নগরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তের অভাবে জরুরি অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছিল না অলোকা মণ্ডলের। অলোকার স্বজন সুব্রত মণ্ডল বলছিলেন, ‘কোথাও রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। ভরসা হয়ে এসেছিলেন দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা। যিনি রক্ত দিয়েছিলেন, তাঁকে আমরা চিনতাম না। করোনাকালে তাঁরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, সেই ঋণ ভোলার নয়।’

দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের আহ্বায়ক শেক্সপিয়ার রায় বলেন, শুধু দাকোপের মধ্যেই নয়, খুলনা জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত দাকোপের রক্তদাতা যোদ্ধারা দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে রক্তদান করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে সংগঠনের মাধ্যমে শতাধিক ব্যাগ রক্ত দাকোপের মানুষকে দান করা হয়েছে।