Thank you for trying Sticky AMP!!

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে পদ্মার পানি দ্রুত কমছে। এ অবস্থায় ঘাট স্থানান্তর নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া থেমে থেমে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের কারণে প্রতিটি ঘাটের মাথা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ২ নম্বর ঘাট এলাকায় বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে তিন দিন ধরে কোনো রকমে চলছিল ছোট তিনটি ফেরি। কিন্তু নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সেগুলোও আর চলাচল করতে পারছে না। 

 ফলে গতকাল বুধবার দিনভর কোনো ফেরি চলেনি। এই অবস্থায় দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ভিড় করছে অপর নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়। কিন্তু সেখানেও ভাঙনের কারণে সব ঘাট চালু রাখা যাচ্ছে না। সব মিলেয়ে ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পরিবহনশ্রমিক ও যাত্রীদের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌ–চ্যানেলের প্রবেশমুখে প্রবল স্রোত। তাই এই পথে পলি অপসারণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যদিকে পদ্মার পানি দ্রুত কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে নৌ–চ্যানেলে ছয় ফুটের কম পানি। পলি অপসারণে ৯টি যন্ত্র বসিয়ে দিনরাত খননকাজ চলছে। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, ছোট ফেরি চলাচলে ন্যূনতম ৮ ফুট পানি প্রয়োজন। বড় ফেরি চলতে প্রয়োজন ১০ ফুট। নৌ–চ্যানেলে সেই পানি না থাকায় ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছে। এতে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। 

গতকাল বেলা তিনটায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ফেরি চলাচল করছে না। ফেরিগুলো ঘাটের পাশে নোঙর করে রাখা। যাত্রাবাহী বাসগুলো যাত্রীদের নামিয়ে লঞ্চে তুলে দিচ্ছে। ঘাটের টার্মিনালেও দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা। চালকেরা ট্রাকের নিচে মাদুর পেতে অলস সময় কাটাচ্ছেন। একই অবস্থা শিমুলিয়া ঘাটে। 

মাদারীপুরে কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতা–সংকটের কারণে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেলে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে। প্রথম আলো

কাঁঠালবাড়ি ঘাটে চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সাদ্দাম খলিফা বলেন, ‘খুলনা থেকে গত বুধবার এসেছি। আজ ছয় দিন হতে চলল। রোজ খরচ হচ্ছে কিন্তু কোনো আয় নেই। ’ 

ঢাকাগামী বাসের যাত্রী শাহাদাত সরদার বলেন, ‘বরগুনা থেকে ফেরি পারাপারের গাড়িতে উঠেছি অনেকগুলো ব্যাগ নিয়ে। ঘাটে এসে শুনি ফেরি চলে না। সব ব্যাগ গাড়ি থেকে নামিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে লঞ্চে উঠতে হলো।’ 

বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ‘নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে সাড়ে তিন ফুট পানি আছে। আমরা ওখানে ১২ ফুট পর্যন্ত খনন করব। আশা করছি কাল (আজ বৃহস্পতিবার) বিকেল নাগাদ খননকাজ শেষ হবে। তারপর ফেরি চলতে পারবে।’

এদিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এখনো যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক হয়নি। দৌলতদিয়ায় ছয় ফেরিঘাটের মধ্যে চালু রয়েছে চারটি। আবার সচল ঘাটেরও একটি আংশিক বন্ধ। এরই মধ্যে পদ্মায় দ্রুত পানি কমতে থাকায় ঘাট স্থানান্তর নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। আর কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া পথে যানবাহনের বাড়তি চাপ পড়ছে। দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ঢাকাগামী যানবাহনের সারি দুই কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। 

দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর উপসহকারী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে নদীর স্রোত ও ভাঙন অনেকটা কমে গেছে। এখন দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঘাট খাড়া হয়ে গেছে। বড় সমস্যা ভাঙনের কারণে প্রতিটি ঘাটের মাথা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যে কারণে ঘাট স্থানান্তর করার মতো মাটি না থাকায় বাড়তি দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। এ সংকট না কাটলে ফেরি চলাচলে আবারও অচলাবস্থা তৈরি হবে।