Thank you for trying Sticky AMP!!

কাজের মান খারাপ, গতিও ধীর

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের তারাগুনিয়া থেকে ডাংমড়কা এলাকা পর্যন্ত সড়কটির বেহাল। গত বুধবার তারাগুনিয়া কৈপালে। ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সড়কের সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় আট কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। আবার কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে যথাসময়ে কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছে খোদ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনজন ঠিকাদারের যৌথ লাইসেন্সে কাজটি হচ্ছে। তবে মূল ঠিকাদার হিসেবে আছেন সাদিকুজ্জামান খান (সুমন)। কাজে কিছুটা ধীরগতি আছে। তবে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি আশা করছেন, চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এলজিইডির দৌলতপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকা থেকে ডাংমড়কা এলাকা পর্যন্ত সড়কটি প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ। এই সড়কে সর্বশেষ সংস্কারকাজ হয়েছে সাত–আট বছর আগে। দীর্ঘদিন সংস্কার না থাকায় সড়কটি বেহাল হয়ে যায়। ফলে সড়কটি সংস্কারের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ জন্য বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ৫৮৩ টাকা। তবে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৫ টাকায়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চুক্তির পর ৫ মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারের লোকজন।

যৌথ লাইসেন্সে সড়কের কাজ পাওয়া তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাদেকুজ্জামান সুমন ও সৈকত এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে সাদেকুজ্জামান দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। আর সৈকত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহিদা বেগম। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত মুকুলের (প্রকৃত নাম আমিনুল ইসলাম) স্ত্রী। যে সৈকতের নামে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তিনি এই দম্পতির ছেলে। এলাকাবাসী বলছেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ হলেও মূলত কাজ করছেন একজনই। তিনি ঠিকাদার সাদেকুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে চরমপন্থী নেতা মুকুলের প্রতিষ্ঠান থাকায় ভয়ে কেউ কিছু বলে না। এ অবস্থায় কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার সাদেকুজ্জামান। প্রথমে ট্রাক্টর দিয়ে সড়ক খুঁড়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর পুরোনো নির্মাণসামগ্রী সড়কে ফেলে সমান করে দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, এখন তারাগুনিয়া ও কৈপাল এলাকায় সংস্কারকাজ চলছে। সড়কের পাশে ছোট ছোট পাথর পড়ে আছে। এক পাশে ইট দিয়ে সড়কের সীমানা ঠিক করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। সব মিলিয়ে এখন তিন–চার কিলোমিটার সড়কে কাজ হচ্ছে। বাকিটা খুঁড়ে সমান করে রাখছে। ওই অংশে প্রচুর ধুলাবালি উড়ছে। এলজিইডি কার্যালয় সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত এই সড়কের সংস্কারকাজের গতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে আর সময় আছে দুই মাসের কিছু বেশি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ ৩৫ ভাগও শেষ হয়নি। দরপত্রের শর্তে বলা হয়েছে, যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, অনেক জায়গায় মালামাল পড়ে আছে। ফলে ধুলাবালুতে খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। চরমপন্থী নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে যুক্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। ঠিকাদার সাদেকুজ্জামান খান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার সাইফুল ইসলাম নামে একজন ঠিকাদারের সঙ্গে আমি যৌথভাবে দরপত্র ফেলেছিলাম। মুকুলের প্রভাব বিস্তার করে আমি কোনো কাজ করছি না। যা কিছু হচ্ছে, সব দরপত্র মোতাবেক কাজ হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, চরমপন্থী নেতা মুকুলের লোকজন ভয় দেখিয়ে সড়কের কাজে অংশীদার হয়েছে। তবে মূল ঠিকাদার তাঁকেই (সাদেকুজ্জামান) করা হয়েছে। মুকুলের প্রতিষ্ঠান নামে মাত্র আছে।