Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। ছবিটি রোববার রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে সকালে তোলা

কানাইঘাটে সিল মারলেও ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে না

ব্যালট পেপারে নির্দিষ্ট প্রতীকে সিল মারলেও ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে না। এমন অভিযোগ একাধিক ভোটারের। সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভায় দুটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার সকাল আটটা থেকে এ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তা চলবে বেলা চারটা পর্যন্ত। ভোটাররা জানিয়েছেন, ভোট শুরুর প্রথম আধঘণ্টা সিলের কালি স্পষ্টভাবে ব্যালট পেপারে বসছিল না। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালে নতুন কালি আনানো হয়।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর কানাইঘাট পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৯ হাজার ৪২৭ জন। তবে কালি-সংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়া ভোটাররা নির্বাচনের পরিবেশ ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভেতরে কয়েক শ নারী ও পুরুষ ভোটার সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কেন্দ্রটির ৬ নম্বর বুথে দায়িত্বরত নৌকা প্রতীকের এজেন্ট আখতারুজ্জামান হিমেল, ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট মোহাম্মদ আলী ও নারকেলগাছ প্রতীকের এজেন্ট ফখরুল ইসলাম জানান, ভোট শুরু হওয়ার প্রথম ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভোটারদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সিল মারা সত্ত্বেও ব্যালট পেপারে কালির ছাপ অস্পষ্টভাবে বসেছিল। এরপর নতুন কালি আনলে ছাপ স্পষ্ট হয়। কালির এ সমস্যার কারণে শুরুতে ভোট গ্রহণে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল।

সকাল পৌনে নয়টার দিকে রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ঢালাইরচর গ্রামের খাদিজা বেগম (২৩) ও রামিজা বেগম (১৯)। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। তবে ব্যালট পেপারে কালি স্পষ্টভাবে পড়েনি। সঠিকভাবে সিল মারলেও কালি অস্পষ্টভাবে বসেছে। এ নিয়ে তাঁরা চিন্তায় আছেন। কালি না পড়ায় ভোট বাতিল হয়ে যায় কি না, এ নিয়ে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

রায়গড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মালিক প্রথম আলোকে জানান, এখানে মোট ভোটার ২ হাজার ১৩৯ জন। ৬টি বুথে ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল নয়টা পর্যন্ত ২২৮ জন ভোট দিয়েছেন। তবে শুরুর দিকে কালি নিয়ে ভোটারদের কিছুটা অভিযোগ ছিল। ভোট শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানও হয়ে যায়। এখন সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছে।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে ইউটিডিসি হল উপজেলা কমপ্লেক্স ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে একটি হলের মধ্যে শামিয়ানা ও কাপড় টাঙিয়ে ৬টি অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বুথকে আলাদা করা হয়েছে পাতলা একটি কাপড় দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে। একই হলের ভেতরে ৬টি বুথ থাকায় প্রচণ্ড শব্দদূষণ হচ্ছে।

ভোটার, এজেন্ট ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের কথাবার্তায় হলজুড়ে কেবল মানুষের কথাবার্তা ভাসছে। এর ফলে শোনার সুবিধার জন্য সবাইকে প্রয়োজনীয় কথাও জোরে জোরে বলতে হচ্ছে। এতে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। এ কেন্দ্রেও ভোট শুরুর আধঘণ্টা পর্যন্ত কালি-সংক্রান্ত জটিলতা ছিল বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

২ নম্বর বুথে দায়িত্বরত নৌকা প্রতীকের এজেন্ট আনোয়ার হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট আবদুল কাইয়ূম ও জগ প্রতীকের এজেন্ট রায়হান উদ্দিন অভিযোগ করেন, কালি-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রথম আধঘণ্টা ভোট গ্রহণে স্থবিরতা ছিল। এ ছাড়া একটি কক্ষের ভেতরে ৬টি বুথ করায় গিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি শব্দদূষণও হচ্ছে প্রচণ্ড। ওই কেন্দ্রের ভোটার নায়াথালু গ্রামের ফারহানা বেগম (২৩) জানান, বুথের ভেতরে ঢুকলেই কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রকমের শব্দদূষণ সেখানে। ভোট দিতে গিয়ে তাই ভোটারদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ইউটিডিসি হল উপজেলা কমপ্লেক্স ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চৌধুরী মো. মঞ্জুর মমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে ওই কেন্দ্রটিতে তিনটি কক্ষ ছিল। সম্প্রতি সেটি ভেঙে একটি মিলনায়তন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই মিলনায়তনের কক্ষটিতেই শামিয়ানা ও কাপড় দিয়ে ৬টি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করতে হয়েছে। এসব বুথের পুরুষ ও নারীদের জন্য ৩টি করে বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। এক কক্ষে সব কটি বুথ হওয়ায় প্রচণ্ড শব্দদূষণ হচ্ছে। তবে শীতের কারণে কালি বসে যাওয়ায় সিল মারতে গিয়ে প্রথম আধঘণ্টা ভোটারদের সমস্যা হয়েছে। পরে নতুন কালি আনা হয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই ভোট গ্রহণ চলছে।’ ২ হাজার ১৫৪ জন ভোটারের মধ্যে প্রথম এক ঘণ্টায় ১৫৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ছবিটি আজ রোববার উপজেলা প্রশাসন ভবন ভোটকেন্দ্র থেকে সকালে তোলা

বেলা ১১টার দিকে কানাইঘাট পৌরসভা নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আবুল হাসনাত প্রথম আলোকে জানান, ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কোনো ধরনের সমস্যা নেই। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। কেবল সকালবেলা কালি-সংক্রান্ত কিছুটা জটিলতা ছিল। শীতের কারণে সম্ভবত কালি বসে গিয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

পৌরসভায় মেয়র পদে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত লুৎফুর রহমান (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত মো. শরিফুল হক (ধানের শীষ)। স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের একজন ‘বিদ্রোহী’ আছেন। তিনি হলেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন (নারকেলগাছ)। রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী নজির আহমদ (হাতপাখা)। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন মো. সুহেল আমীন (জগ) ও কাওছার আহমেদ (মোবাইল ফোন)।