Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কুপি জ্বালাইয়া রাইত কাডাইতাম, এহন মোগো গ্রামেই বিদ্যুৎ হয়’

বড় পর্দায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখছে সাধারণ মানুষ। আজ সোমবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের শেখ কামাল মিলনায়তনে

‘আমরা ছিলাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। পায়ে হাঁইট্যা মোগো উপজেলা সদরে যাওন লাগত। কুপিবাতি জ্বালাইয়া আমরা রাইত কাডাইতাম। আর এহন মোগো গ্রামেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। কুপিবাতির পরিবর্তে মোরা বিদ্যুতের বাতি জ্বালাই। এলাকায় দোকানপাট হইছে। বেচাকেনা বাড়ছে। কইতে গেলে এহন একটা উন্নত জায়গার মানুষ আমরা।’

কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার দাশের হাওলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন মৃধা। আজ সোমবার উপজেলার ধানখালীর মাছুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসে বড় পর্দায় (প্রজেক্টর) দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখার সময় তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন ঘিরে আবুল হোসেনের মতোই উচ্ছ্বসিত এই উপজেলার বাসিন্দারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার পরিবেশবান্ধব আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ নদের পাশে নির্মিত হয়েছে।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য কলাপাড়া পৌর শহরের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তন, কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের হোটেল বনানীর হলরুম এবং ধানখালীর মাছুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রজেক্টর স্থাপন করা হয়। এ তিনটি স্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ পুরো অনুষ্ঠানটি দেখে। দুপুর ১২টার কিছু আগে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা শুরু হয়। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) সহায়তায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক এক্সপেনসিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড প্রজেক্ট স্থাপন করে সাধারণ মানুষের জন্য পুরো অনুষ্ঠানটি দেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

Also Read: আঁধারঘেরা জনপদে আলোর ঝলক

শেখ কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠান দেখতে আসা নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মী মো. শামীম ব্যাপারী বলেন, ‘আমরাও বিদ্যুৎ পামু, সারা দেশের মানুষও আমাগো এইহানের বিদ্যুৎ পাইবে, এইডা সত্যিই আনন্দের। এই আনন্দের কোনো শ্যাষ নাই। জাতীয় অগ্রগতির সাথে আজ আমরা অংশীদার হইছি।’

উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সালমা কবীর বলেন, ‘দলের একনিষ্ঠ কর্মী আমি। আমি অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাইনি। এতে মনটা খারাপ হয়েছে। তারপরও ঘরে বসে থাকিনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন, উদ্বোধন এবং পুরো অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য চলে এসেছি। এভাবে বড় পর্দায় দেখেও আমি তৃপ্ত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সাগরপারের অবহেলিত এ জনপদকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে যাতায়াতের পথে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সাজসজ্জা করা হয়েছিল। এ ছাড়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াতের সড়কপথে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছবি-সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টানানো হয়। স্থানীয় মানুষসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ মাহেদ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তৎপর ছিলেন।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে স্থাপন করা প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে দেখতে পারে, এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে বিকল্প হিসেবে জেনারেটর সুবিধাও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলে জানান কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুতের এজিএম (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) সুমন সাহা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুরুর আগে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তাঁর বক্তব্যের পর ‘ও জোনাকি কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ’ গানের সঙ্গে সরকারের নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়েও একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

বেলা একটায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় বিভিন্ন রঙের আবিরের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে অন্য রকম এক আবহের সৃষ্টি করা হয়। সব শেষে ছিল সংগীতশিল্পী ও সাংসদ মমতাজ বেগম, চন্দনা মজুমদারসহ অন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশনা।

Also Read: যেভাবে বদলে গেল রাঙ্গাবালী

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ জন্য ১ হাজার ২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে আরও একটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এর বাইরে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক, ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ এবং ৫০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

Also Read: দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী